রমেল চাকমা হত্যার বিচারের দাবিতে তিন পার্বত্য জেলায় ৪৬ স্থানে গণ-মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সেনা হেফাজতে নান্যাচর কলেজের ছাত্র(এইচএসসি পরীক্ষার্থী) ও পিসিপি’র নান্যাচর শাখার সাধারণ সম্পাদক রমেল চাকমার মৃত্যুর জন্য দায়ী নান্যাচর জোন কমাণ্ডার মোঃ বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরের শাস্তি, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ও রমেল চাকমার পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে গতকাল সোমবার (৮ মে ২০১৭) খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় ৪৬টি স্থানে গণ-মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। পৃথক পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত এসব মানববন্ধনে কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন চলাকালে রাঙামাটির ঘাগড়ায় এবং খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে সেনাবাহিনীর হামলা ও বাধা প্রদানের খবর পাওয়া গেছে। ঘাগড়া থেকে পুলক চাকমা নামে ইউপিডিএফের এক সংগঠককে সেনাবাহিনী আটক করেছে।
আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যমতে, খাগড়াছড়ি জেলায় ৩০টি স্থানে গণ-মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌর এলাকার মধ্যে উপজেলা পরিষদের সামনে, নারাংহিয়া রেডস্কোয়ার, স্বনির্ভর; খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় জামতলি, পেরাছড়ার ব্রিকফিল্ডএলাকা্, গিরিফুল, ২নং রাবার বাগান প্রকল্প, ছোটনালা, শিবমন্দির, মুনিগ্রাম, ফরেস্ট টিলা, খাগড়াছড়ি -রাঙামাটি সড়কের চম্পাঘাট, গুঙুরোছড়ি, বিজিতলা; পানছড়ি উপজেলার কুড়াদিয়া ছড়া, পুজগাঙ, ধুধুকছড়া; দীঘিনালা উপজেলায় ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের পুকুরঘাট, ৫নং বাবুছড়া ইউনিয়নের নুয়ো বাজার, ২নং বোয়ালখালি ইউনিয়নের সাধকছড়া; মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিল, রামগড় উপজেলা সদর, গুইমারা উপজেলায় গুইমারা সদর ইউনিয়নের বাইল্যাছড়ি তৈমাতাই ব্রিজের সামনে, সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের তৈকর্মা এলাকা ও হাফছড়ি ইউনিয়নের কালাপানি এলাকায়; লক্ষীছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় হাসপাতাল গেইট, শিলাছড়ি ও মংহ্লাপাড়ায় এবং মহালছড়ি উপজেলায় লেমুছড়ি ও কেঙেলছড়ি এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি এলাকার জনসাধারণ।
এরমধ্যে মানিকছড়িতে শান্তিপুর্ণ মানববন্ধন চলাকালে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে ২ গাড়ি আর্মি গিয়ে বিনা কারণে কাপুরুষোচিত হামলা চালায়। এতে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ১৮ জন নারী-পুরুষ আহত হন। সেনারা রুমেন চাকমা, রাপ্রু মারমা, সুইথুই মারমা, অংচেইরি মারমাকে আটক করে নিতে চাইলে নারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং উক্ত ৪ জনকে সেনাদের কবল থেকে মুক্ত করে আনে। নারীদের প্রতিরোধের মুখে পরে সেনারা সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়।
রাঙামাটি জেলায় ১৫টি স্থানে গণ-মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি, বোধিপুর, আবাসিক, ধর্মঘর, হেডম্যান পাড়া, কুদুকছড়ি বাজার; নান্যাচর উপজেলার ভুইয়ো আদাম, পোরছড়ি, ঘিলাছড়ি, বগাছড়ি ও বেতছড়ি; কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া, ঘাগড়া এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের লাদুমান বাজার ও মারিশ্য-দীঘিনালা সড়কের ১২ কিলো এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে এলাকাবাসী ও রমেল হত্যা প্রতিবাদ কমিটি।
এরমধ্যে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ায় মানববন্ধন চলাকালে জেএসএস(সন্তু)-এর কতিপয় স্থানীয় নেতা-কর্মী সেনাবাহিনী সমেত এসে বাধা দেয় এবং ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলে দেয়। পরে সেখান থেকে চলে আসার সময় জুনুমা ছড়া এলাকা থেকে সেনাবাহিনী ইউপিডিএফ সংগঠক পুলক চাকমাকে আটক করে।
বান্দরবান জেলা সদরের প্রেসক্লাবের সামনে ইউপিডিএফ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম-এর উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে ইউপিডিএফ-এর বান্দরবান জেলার প্রধান সংগঠক ছোটন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যাসহ উভয় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
গণ-মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক নান্যাচর জোন কমাণ্ডার মোঃ বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরের শাস্তি, রমেল চাকমার পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং অন্যায় ধরপাকড়, নির্যাতনসহ রাজনৈতিক দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।