সেনাবাহিনী কর্তৃক ছাত্রনেতা রমেল চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে

রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ সফলভাবে পালিত

0

Rangamatisorokoborodরাঙামাটি : রাঙামাটির নান্যাচর কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও  পিসিপি’র নান্যাচর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও রমেল চাকমাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতন চালিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারী নান্যাচর জোন কমা-ার বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরসহ জড়িত সেনা সদস্যদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে আজ ২৩ এপ্রিল ২০১৭ রবিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়েছে।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও রমেল চাকমা হত্যা প্রতিবাদ কমিটি যৌথভাবে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।

অবরোধের সমর্থনে রবিবার সকাল থেকে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করে পিসিপি ও রমেল চাকমা হত্যা প্রতিবাদ কমিটির নেতা-কর্মী সমর্থকরা। কোন কোন স্থানে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে তা18118740_796806963815905_460827381446483471_nরা।

অবরোধের কারণে সড়ক ও নৌপথে দূরপাল্লার ও অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। জেলা শহর থেকে দূরপাল্লার ভারী যানবাহন ও লঞ্চ উপজেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি। অফিস আদালত খোলা থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল কম। অবরোধের সমর্থনে লোকজন পায়ে হেঁটে বিভিন্ন কাজে গেছে।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর সভাপতি বিনয়ন চাকমা, সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা ও রমেল চাকমা হত্যা প্রতিবাদ কমিটির আহ্বায়ক সুনন্দা তালুকদার এক বিবৃতিতে সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি সফল করায় জেলার সকল যানবাহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আগামীতেও সকল ধরনের কর্মসূচিতে সহযোগীতা পাবেন বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

বিবৃতিতে তারা বলেন, কোন প্রকার মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই সেনাবাহিনী এইচএসসি পরীক্ষাথী রমেল চাকমাকে অন্যায়ভাবে আটক করে জোনে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, সেনারা রমেল চাকমার মরদেহ পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে সামাজিক-ধমীয় রীতিনীতি ছাড়াই এবং পরিবার ও আত্মীয় স্বজানের অনুপস্থিতিতে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলেছে। এর চেয়ে নিষ্ঠুর বর্বরতা আর কি হতে পারে?

Rangamati_pic-mপার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা সন্ত্রাস বৃদ্ধিতে নেতৃবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রমোশনের আশায় সেনাবাহিনীর কায়েমী স্বার্থবাদীরা বিনাদোষে নিরীহ লোকজনের উপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালাচ্ছে। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ সেনাবাহিনীর নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মী, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, ছাত্র কেউ তাদের নিপীড়ন থেকে রেহায় পাচ্ছে না। নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ রমেল চাকমা হত্যাকা-ের বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক হত্যার সাথে জড়িত নান্যাচর জোন কমা-ার মোঃ বাহালুল আলম, মেজর তানভীরসহ জড়িত সেনা সদস্যদের গ্রেফতার, নিহতের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান, অন্যায় ধরপাকড়-নির্যাতন বন্ধ করা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা বাতিলের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত ৫ এপ্রিল সকালে নান্যাচর উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে রমেল চাকমাকে অন্যায়ভাবে আটক করে মেজর তানভীরের নেতৃত্বে নান্যাচর জোনের সেনা সদস্যরা। আটকের পর তাকে নান্যাচর জোনে নিয়ে গিয়ে দিনভর মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন চালানো হলে রমেল চাকমা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিজেরা তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সেনা নজরদারিতে দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৯ এপ্রিল বুধবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম থেকে রমেল চাকমার মরদেহ বাড়ির উদ্দেশ্যে আনা হলে বুড়িঘাট বাজার এলাকায় পৌঁছানোর পর রাত ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে মরদেহ ছিনিয়ে নেয়। এরপর পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর না করে শুক্রবার দুপুরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পেট্রোল ঢেলে রমেল চাকমার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More