লংগদুতে সেটলার হামলার শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
গত ১৭ ফেব্রুয়ারী লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়ন ও বগাচদর ইউনিয়ের কয়েকটি গ্রামে সেটলার বাঙালিরা হামলা, লুটপাট ও অগি্নসংযোগ চালায়। ঘটনার একদিন পর খাগড়াছড়ি সদর থেকে চঞ্চুমনি চাকমার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান৷ অন্য সদস্যরা হলেন মঞ্জুলাল দেওয়ান ও নিপুল চাকমা৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফিরে এসে টিম প্রধান চঞ্চুমনি চাকমা জানান-
১৮ ফেব্রুয়ারী দুপুরে আমরা খাগড়াছড়ি থেকে লংগদুর উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সন্ধ্যার দিকে আমরা লংগদু সদরে গিয়ে পৌঁছি৷ সেখানে এক ব্যক্তির বাড়িতে রাত যাপনের পর ১৯ ফেব্রুয়ারী সকাল ১০টার দিকে আমরা লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত টিমের সাথে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হই৷ সকাল আনুমানিক ১১:৩০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছি৷ সেখানে পৌঁছি হ্যালিপ্যাড নামক স্থানে আমাদেরকে অনেণ অপক্ষা করতে হয়। পরে আমরা সেটলারদের লাগিয়ে দেয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া রনজিত্ কার্বারী পাড়া, রাঙী পাড়া, শান্তি নগর গ্রাম পরিদর্শন করি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলি৷ তারা জানান বর্ডার গার্ডের সদস্যদের সহযোগিতায় সেটলার বাঙালিদের হামলা, লুটপাট ও অগি্নসংযোগ করেছে৷ বাঙালিরা যখন বাড়ি-ঘরে লুটপাট চালাচ্ছিল তখন বর্ডার গার্ডের সদস্যরা তাদের বাধা দেয়নি৷ বরংশ যখন ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে যাচ্ছে, বাঙালিরা লুটপাট করছে তখন বর্ডার গার্ডের সদস্যরা বাঙালিদের পিছনে থেকে তাদেরকে উত্সাহ যুগিয়েছে৷ ফলে বাঙালিরা বাড়ি ঘরে অগি্নসংযোগ আর লুটপাট করতে সাহস পায়।
সেখানে ৩টি গ্রামে মোট ২৪টি ঘর পুড়ে যায়৷ এর মধ্যে ২টি পাড়া কেন্দ্র সহ ১৯টি ঘর পাহাড়িদের এবং বাকী ৩টি বাঙালীরা তাদের নিজেদের দাবি করছে৷ তবে বাঙালিরা যেসব ঘর তাদের বলে দাবি করছে সেগুলো বসত ঘর নয়৷ খেত খামারে কাজ করার জন্য তৈরি করা টং ঘর। সচরাচর যেগুলো বসত বাড়ি হিসাবে গণ্য করা হয় না।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় অনেক বাঙালি আমাদের বলেছেন সাবের আলী নামে যে বাঙালির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত ঘটেছে সেই সাবের আলীর মৃত্যু ছিল স্বাভাবিক মৃত্যু৷ হাইপ্রেসার সহ বিভিন্ন রোগে সে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন৷ তাকে পাহাড়িরা মেরে ফেলায়নি। অনেক বাঙালি বলেন যে, এ ধরনের ঘটনা সৃষ্টি না করার জন্য তারা বলেছিলেন৷ গুলশাখালী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু তালেব বলেছেন, সাবের আলীর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়েছে৷ আমি দাহ করার জন্য আর্থিক সহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কথাও বলেছি৷ কিন্তু তারপরও এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল ঘটনাটা ঘটিয়েছে।
তিনি জানান, আমরা যখন সেখানে পৌঁছি তখন ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন অনেকে কোন ভাত খেতে পাইনি। তারা কাঁচা কলা খেয়ে দিন পার করছেন৷ বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন এক প্রকার অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে৷ লংগদু সদরে আসতে হলে তাদেরকে বাঙালি পাড়া দিয়ে আসতে হয়৷ ফলে তারা এখন গ্রাম থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে৷ ফলে তারা নানা অসুবিধার মধ্যে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সেখানে বর্ডার গার্ডের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যা আপাতত একটি ব্র্যাক পরিচালিত পাড়া কেন্দ্রের জায়গা দখল করে বর্ডার গার্ডের সদস্যরা অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে এটি স্থায়ী ক্যাম্পে পরিণত করা হবে জানা গেছে। শান্তিনগর গ্রামের কয়েক পরিবারের ভোগদখলকৃত জায়গা সহ বসতভিটা থেকে তাদেরকে উচ্ছেদ করে এ ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়েছে৷ যাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে তারা হলেন সন্তোষ চাকমা (৩২) পিতা- ভুলসিং চাকমা, শরত্ চন্দ্র চাকমা, মঙ্গল ধন চাকমা ও নবীন কুমার চাকমা।