‘শান্তিবাহিনী’ এখন প্রদর্শনীয় বস্তু !
সিএইচটিনিউজ.কম
বিশেষ প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের সশস্ত্র সংগ্রামে শান্তিবাহিনী ছিল পাহাড়ি জনগণের ভরসার একটি বাহিনী। শান্তিবাহিনী বললে সবাই চিনতো, জানতো। এই গেরিলা বাহিনীর নাম শুনলেই সরকারী বাহিনী ভয়ে কেঁপে উঠতো। কিন্তু তিলে তিলে গড়ে উঠা এই বাহিনী কালক্রমে তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর ও ‘৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে এই বাহিনী বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কিন্তু পরিহাসের বিষয় হচ্ছে- শান্তিবাহিনী নামে এককালের এই গেরিলা বাহিনী এখন সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রদর্শনীয় বস্তু! শান্তিবাহিনী গেরিলাদের অস্ত্র সমর্পণের ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করে সরকার ও সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি সম্প্রীতির গুণগান গায়, কৃতিত্ব জাহির করে।
গত ১১ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে বৈসু, সাংগ্রাই, বিঝু উপলক্ষে এক র্যালির আয়োজন করা হয়। সেখানে “শান্তি সম্প্রীতিতে সেনাবাহিনী”! ব্যানার হেডিং দিয়ে প্রদর্শন করা হয়, শেখ হাসিনার হাতে সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পণ সহ শান্তি বাহিনী গেরিলাদের অস্ত্র সমর্পণের বেশ কিছু ছবি। সেনাবাহিনীর এই প্রদর্শনী দেখে সেদিন উপস্থিত অনেকেই মন্তব্য করে বলেন, ‘এককালের গেরিলা বাহিনী এখন প্রদর্শনীর বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এটা যেন জাতির জন্য বড়ই ট্রাজেডি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি মন্তব্য করে বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনী যতই শান্তি সম্প্রীতির বাণী প্রচার করুক না কেন আদতে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ শান্তিতে নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, ধরপাকড়, হয়রানি আগের মতোই রয়েছে। আনন্দ উৎসব আয়োজনেও চলছে নানা হয়রানি-খবরদারি। জেলা পরিষদ মাঠে উক্ত শান্তি সম্প্রীতির প্রদর্শনীর একদিন পর ১২ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে সকল জাতিসত্তার জনগণের অংশগ্রহণে সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির আয়োজিত বৈসাবি শোভাযাত্রায় হামলা ও ধরপাকড় চালানো হয়েছে। এমনটাইতো চলছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, সরকার ও সেনাবাহিনীর শান্তি সম্প্রতি নামের এই জাতি ধ্বংসের খেলা আর কতদিন চলবে?
——————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।