সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিশিষ্টজনের বিবৃতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও সংখ্যালঘু জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার ৩,৪৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারী, শিক্ষক, সমাজ কর্মী ও বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিবর্গ আজ ২৪ জুলাই রবিবার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি জেলা থেকে ২,০৯৯ জন এবং রাঙামাটি জেলা থেকে ১,৩৫১ জন ব্যক্তি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ২৩০ জন জনপ্রতিনিধি, ৫১ জন হেডম্যান, ২৬৯ জন কার্বারী ও ২৩২ জন শিক্ষক রয়েছেন।
খাগড়াছড়িজেলা থেকে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ অনন্ত বিহারী খীসা, জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রভাকর চাকমা, খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ বোধিসত্ত্ব দেওয়ান, ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রবি শংকর তালুকদার, খাগড়াছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিরাপদ তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত সাব রেজিষ্টার বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা, খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন কুমার চাকমা, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী দীপায়ন চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি রণিক ত্রিপুরা, নুনছড়ি মৌজার হেডম্যান ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, মার্মা ঐক্য পরিষদের নেতা রিম্রাচাই মারমা, সমাজ কর্মী ধীমান খীসা, ২৬৫ নং বাঙ্গালকাটি মৌজার হেডম্যান নিবুল লাল রোয়াজা, ২৬৬ নং পেরাছড়া মৌজার হেডম্যান অনিল কুমার চাকমা, হিল স্টার ক্লাবের সভাপতি বিশ্বজিত্ দেওয়ান, পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজিত বরণ চাকমা ও সহকারী শিক্ষক বিম্বিসার খীসা, হেডম্যান গরেন্দ্র ত্রিপুরা, ৫নং ভাইবোন ছড়া ইউপি চেয়ারম্যান কান্তি লাল দেওয়ান, ২৬২ নং গোলাবাড়ি মৌজার প্রাক্তন হেডম্যান অংক্যচিং চৌধুরী, পানখাইয়া পাড়ার সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রীতিময় চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সংঘমিত্র দেওয়ান, কমলছড়ি মৌজার হেডম্যান কীর্তিময় চাকমা, ২নং কমলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সুপন খীসা, ২৫৯ নং দাঁতকুপ্যা মৌজার হেডম্যান রমনী মোহন দেওয়ান,দিঘীনালা উপজেলা চেয়ারম্যান ধর্মবীর চাকমা, দিঘীনালা উপজেলার কবাখালী মৌজার হেডম্যান দীপংকর দেওয়ান, ২নং বোয়ালখালী ইউপি চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা, দিঘীনালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিয় চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও চাঙমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির পরিচালক আনন্দ মোহন চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সাধন বিকাশ চাকমা, পাবলাখালী শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রমোদ জীবন চাকমা, কৃপাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কনক রঞ্জন চাকমা, ৫নং বাবুছড়া ইউপি চেয়ারম্যান পরিতোষ চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সোনা রতন চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান থুইহাঅং মারমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাকলী খীসা, মহালছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান লাব্রেচাই মারমা, মাইসছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শান্তশীল চাকমা, ক্যায়াংঘাট ইউপি চেয়ারম্যান কিরণ চাকমা,মাইসছড়ি বাজার চৌধুরী উগ্য চৌধুরী, ২৪৯নং ক্যয়াংঘাট মৌজার হেডম্যান রতন বিকাশ চাকমা, মাইসছড়ি মৌজার হেডম্যান স্বদেশপ্রীতি চাকমা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার দলদলি মৌজার হেডম্যান দ্বীন মোহন ত্রিপুরা, বুদ্ধধন কার্বারী পাড়ার গ্রাম প্রধান শান্তিমনি চাকমা, রামগড় উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী, মানিকছড়ি উপজেলার ২নং বাটনাতলী ইউনিয়নের মহিলা সদস্য জ্যোতিমালা ত্রিপুরা, বুদংপাড়া গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বী ডা: সাথৈয়াই মারমা, ছুদুরখীল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উথোয়াই মারমা, বুদংপাড়া গ্রামের কার্বারী দয়া কুমার ত্রিপুরা, লক্ষীছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলন চাকমা, লক্ষীছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র চাকমা, লক্ষীছড়ি হাইস্কুলের শিক্ষক হরিলাল চাকমা, বমাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রতুল কান্তি চাকমা, ৮৪নং মুক্তাছড়ি মৌজার হেডম্যান শান্তি কুমার চাকমা, ৮৫ নং বর্মাছড়ি মৌজার হেডম্যান সাথোয়াই চৌধুরী, ৯২ নং লেলাং মৌজার হেডম্যান সুইচালা চৌধুরী, বর্মাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক উজ্জ্বল চাকমা,পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা, ৩নং পানছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অসেতু বিকাশ চাকমা, লতিবান ইউপি চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমা, চেঙ্গী ইউপি চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা, লোগাং ইউপি চেয়ারম্যান সমর বিকাশ চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রভাকর চাকমা, অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সুধাংশু বিকাশ চাকমা, পানছড়ি কলেজের অধ্যক্ষ সমীরদত্ত চাকমা ও সাংবাদিক এস চাঙমা সত্যজিত অন্যতম৷
অপরদিকে রাঙামাটি জেলা থেকে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন রাঙামাটি সদর উপজেলার কুদুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান সন্টু বিকাশ চাকমা, কুদুকছড়ি মৌজার হেডম্যান সম্রাটসুর চাকমা, ১১৩ নং তৌমিদুং মৌজার হেডম্যান স্বপন কুমার চাকমা, নান্যাচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রীতিময় চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান কমেন্দু বিকাশ চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলকী চাকমা, নান্যাচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঙ্গদ চাকমা, ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অমর জীবন চাকমা, ২নং নান্যাচর ইউপি চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ খীসা, ৬২ নং সাবেং মৌজার হেডম্যান মৃদুল কান্তি দেওয়ান, ১নং সাবেক্ষং ইউপি চেয়ারম্যান সুপন চাকমা, নান্যাচর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূতেশ্বর চাকমা, ৫নং বন্দুকভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান বরুণ কান্তি চাকমা,বন্দুক ভাঙা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অতন চাকমা, বেতছড়ি বাজার চৌধুরী অমর বিকাশ চাকমা, কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান থুইমং মারমা, পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুনীল কান্তি চাকমা, ডানে উল্টা মৌজার সাবেক হেডম্যান জগদীশ চন্দ্র তালুকদার, কাউখালী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অর্জুন মণি চাকমা, ১০১ নং ঘিলাছড়ি মৌজার হেডম্যান পুষ্পল কুসুম তালুকদার, হারাঙ্গী পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপংকর চাকমা, জুরাছড়ি উপজেলার ১নং ধামাইছড়ি মৌজার হেডম্যান রবীন্দ্রলাল চাকমা, ১৩২ নং মিতিংগাছড়ি মৌজার হেডম্যান মিলন শংকর চাকমা, ১নং সুবলং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তরুণ জ্যোতি চাকমা, ১৪০ নং বাঘাছোলা মৌজার হেডম্যান সুশীল রঞ্জন তালুকদার, ২০নং বেগেনাছড়ি মৌজার হেডম্যান প্রহর চাকমা, লংগদু উপজেলার ৭নং লংগদু ইউনিয়নের সংরতি মহিলা আসনের মেম্বার কামনা চাকমা, বিশিষ্ট মুরুব্বী অজিত কুমার চাকমা, ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার চাকমা, বাঘাইছড়ি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাগরিকা চাকমা, শিজক কলেজের প্রভাষক সচিব চাকমা, কাচালং কলেজের প্রভাষক দেব প্রসাদ চাকমা, ৩৫ নং বঙ্গলতলী ইউপি চেয়ারম্যান তারুসি চাকমা, ৩২ নং বাঘাইছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অলিভ চাকমা, ৩৪ নং রূপকারী ইউপি চেয়ারম্যান পারদর্শী চাকমা, ৩৬ নং তিনটিলা মৌজার হেডম্যান অনিল রঞ্জন দেওয়ান, বঙ্গলতলী মৌজার হেডম্যান বিশ্বজিত্ চাকমা, ৩৬ নং সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা, হেডম্যান গোবিন্দ চাকমা ও নোয়া পাড়া গুচ্ছগ্রামের কার্বারী চিত্ত রঞ্জন চাকমা অন্যতম৷
বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ২৫ জুন ২০১১ জাতীয় সংসদে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল ২০১১ উত্থাপনের পর ৩০ জুন তড়িঘড়ি করে তা পাশ করা হয়েছে৷ এই বিলে বর্তমান সংবিধানের ৬ নং অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব করে বলা হয়েছে: “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন৷” আমরা এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিগুলোসহ সমতল অঞ্চলে বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ একটি বহু-জাতিক ও বহু-ভাষিক রাষ্ট্র৷ বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু নাগরিক হিসেবে সবাই বাংলাদেশী। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের ভিন্ন ভাষাভাষী সংখ্যালঘু জাতিগুলো নিজেদের কখনোই বাঙালি বলে পরিচয় দেবে না৷
বিবৃতিতে তারা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংখ্যালঘু জাতিগুলোর পরিচিতি, অধিকার ও মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকার স্বীকৃতি না দেয়া, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বলবত্ রাখার মাধ্যমে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা এবং ৩৮ নং অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকদের সংগঠন করার অধিকার খর্ব করার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানান।
তারা সরকারের কাছে ৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো অবিলম্বে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর নিজ জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা পূর্বক আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রদান করতে হবে এবং পাহাড়িজনগণের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতি প্রদান, সেটলারদের সমতল অঞ্চলে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির জেলার বিভিন্ন উপজেলা ইউনিট উপরোক্ত স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন।