রাঙামাটির কুদুকছড়িতে তিন সংগঠনের আলোচনা সভা
সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি
রাঙামাটি : সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের উপর চাপিয়ে দেওয়া বাঙালি জাতীয়তা প্রত্যাহার ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলার নেতৃবৃন্দ।
বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাশের ৬ বছরপূর্তি উপলক্ষে আজ ৩০ জুন ২০১৭, শুক্রবার রাঙামাটির কুদুকছড়িতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
“গণবিরোধী সংবিধান ছুঁড়ে ফেল, নতুন সংবিধান তৈরী কর; জাতিসত্তার পরিচিতি হরণ, ১১দফা নির্দেশনা জারির মাধ্যমে দমন-পীড়ন, জ্বালাও-পোড়াও, খুন-খারাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী যুব সমাজ গর্জে উঠো” এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলার আহ্বায়ক ধর্মশিং চাকমার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নিলয় চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি মন্টি চাকমা, বৃহত্তর পর্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সহ সভাপতি নিকন চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সাবেক সভাপতি শান্তি প্রভা চাকমা। সভায় মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ সংগঠক সুমেন চাকমা।
বক্তারা বলেন, ২০১১ সালের ৩০ জুন জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাসের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ এদেশে বসবাসরত ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসত্তার জনগণের উপর জোরপূর্বক উগ্র বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। এই সংশোধনীর ৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া গণ্য হইবেন”। এতে করে সরকার দেশের সংখ্যালঘু জাতির অস্তিত্বকে সম্পুর্ণ অস্বীকার করেছে।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ এক জাতির রাষ্ট্র নয়, বহু জাতির রাষ্ট্র। এই দেশে বাঙালি ছাড়াও চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সান্তাল, গারো, মুনিপুরিসহ আরো ৪৫টির অধিক জাতিসত্তা রয়েছে। যারা যুগ যুগ ধরে এই দেশে নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে বসবাস করে আসছে। বক্তারা পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির মাধ্যমে এদেশের সংখ্যালঘু সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান।
সভায় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে কার্যত সেনাশাসন চালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা জারির মাধ্যমে সেনাশাসনকে বৈধতা দিয়ে জনগণের উপর দমন-পীড়ন, জ্বালাও-পোড়াও, খুন-খারাবি চালানো হচ্ছে।
সভা থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা, দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করণ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জারিকৃত অগণতান্ত্রিক ১১ নির্দেশনা বাতিল ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানান।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।