এখনো উচ্ছেদ আতংকে পাহাড়িরা

সাজেকে সেনা-সেটলার হামলার অর্ধযুগ পূর্ণ!

0

Sajek hamla photoসিএইচটি নিউজ ডটকম
২০১০ সালের এ দিনে (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে সেনা ও অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সেটলাররা যৌথভাবে পাহাড়িদের ওপর বর্বরোচিত হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তাণ্ডবলীলা চালায়। সেনা জওয়ানরা নিরস্ত্র পাহাড়ি জনগণের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলে ঘটনাস্থলে নিহত হন বুদ্ধপুদি চাকমা ও লক্ষী বিজয় চাকমা নামে দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা। ২০ ফেব্রুযারিও সাজেকে আক্রমন অব্যাহত থাকে। হামলার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়িতেও ২২-২৩ ফেব্রুয়ারী সাতভাইয়্যাপাড়া-মা’জনপাড়ায় সেটলাররা সেনা সহায়তায় হামলা চালায়। সাতভাইয়্যাপাড়ায় বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। মা’জনপাড়ায় দোকানপাটসহ পাহাড়িদের বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়। পরের দিন খবংপুজ্যায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে নির্বিচারে গ্রামবাসীদের ধরপাকড় চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে।

সাজেকের ঘটনায় হামলাকারী দুর্বৃত্তরা ২টি বৌদ্ধ বিহার ও ৩টি গীর্জাসহ ১১টি গ্রামের পাহাড়ি পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই করে দেয়। এছাড়া শিশুতলি গ্রামের বাসিন্দা রূপন চাকমাকে গুম করে ফেলে। এটা ছিল সাজেকের দ্বিতীয় বারের মত হামলা। এর আগে ২০০৮ সালেও সাজেকে সেনা সহায়তায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সেটলাররা পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল।

সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত লক্ষ্মী বিজয় চাকমা। ফাইল ছবি।
সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত লক্ষ্মী বিজয় চাকমা। ফাইল ছবি।

সাজেকে হামলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করে সেখানে সেটলার জনবসতি গড়ে তোলা। মূলতঃ এ ষড়যন্ত্র শুরু হয় বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়। পরে ২০০৭ সালে-২০০৮ সালে সেনানিয়ন্ত্রিত মঈন উদ্দিন – ফখরুদ্দীনের সরকারের আমলে উক্ত ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চুড়ান্ত পদক্ষেপ গৃহীত হয়। সে সময় সেনা সহায়তায় নতুন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে সেটলারদের এনে সাজেকে পুনর্বাসন শুরু হয়।

২০০৮ সালের ২০ এপ্রিলে একবার সেনাবাহিনী ও সেটলাররা পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালায়। সে সময় ৪টি গ্রামের ৭৭টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু তারা ফিরে যেতে না যেতেই সেটলাররা সেনা সহায়তায় ৯ আগষ্ট আবার গঙ্গারামদোরের ৪টি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালায়। এরপর ১৯ আগষ্ট সেটলাররা অপর এক হামলায় রেতকাবা গ্রামের লাদুমনি চাকমাকে কুপিয়ে খুন করে। বাঘাইহাট সেনা জোন এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকায় থেকে নেতৃত্ব দেয়।

Sajeker protibadi jonotaসাজেক জনগণের প্রতিবাদ। ফাইল ছবি

সাজেক হামলার অর্ধযুগ হলো, কিন্তু ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। এ এলাকা থেকে স্থানীয় পাহাড়িদের বিতাড়িত করে এটি একটি মুসলিম অধ্যুষিত ইউনিয়নে পরিণত করার সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের মূর্তি স্থাপনের ক্ষেত্রেও সেনা-প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। সাধারণ লোকজনকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখতে সেখানে অযৌক্তিকভাবে পুলিশ চৌকি বসানো হয়েছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। তারা এও অভিযোগ করেছেন যে, সেনা-সেটলার হামলার পরও যারা এখনো এলাকা ছেড়ে যায় নি, তাদের প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতি আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে রেখে বিতাড়িত করার নানা চক্রান্ত সেনা-প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি রয়েছে। অন্যদিকে সাজেকের দুর্গম এলাকা লঙ্কর রুইলুইয়ে পর্যটনের নামে সেনাবাহিনী ভূমি অধিগ্রহণ করেছে। এতে সংখ্যালঘু পাংখো, ত্রিপুরা জাতিসত্তা উচ্ছেদের শিকার হবে এলাবাসী আশঙ্কা করেছেন। অবাধে ও বেপরোয়া যন্ত্রচালিত যানের কারণে সাজেকের পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে, তার আলামত ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও পরিবেশবিদদের পক্ষ থেকেও সাজেক বনাঞ্চল রক্ষার্থে সরব হওয়া উচিত বলে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মত প্রকাশ করেছেন।
—————–

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More