স্বনির্ভর হামলার পরে খাগড়াছড়ির বর্তমান পরিস্থিতি

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ গতকাল ০৭ জুন খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিজিবি’র প্রত্যক্ষ হামলার সময় ও পরে পুলিশবাহিনী কর্তৃক সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক আটকের পরে খাগড়াছড়ি জেলার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। সকালের দিকে এই হামলার পরপরই বিজিবি ও পুলিশ উত্তর হবংপুজ্জ্যে গ্রামের একটি বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে প্রায় ১৫ জন আশ্রয়গ্রহণকারীকে আটক করে। অভিযোগ এসেছে বাড়িঘর তল্লাশী চালানোর সময় মালামাল তছনছ করা হয়েছে এবং কারো কারো মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকাপয়সাও চুরি করে নেয়া হয়েছে। হামলার পরপরই বিশেষ করে বিজিবি সদস্যরা স্বনির্ভর বাজারের দোকানদারদের উপর হুমকি ধামকি প্রদান করে এবং জোর করে দোকাটপাট বন্ধ করতে বাধ্য করে। এছাড়া এসময় লোহার রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে পাহাড়িদের ব্যাটারি চালিত টমটম গাড়িতে জোরে বাড়ি মেরে তাদের সন্ত্রস্ত করে।

Khagrachariএদিকে স্বনির্ভর বাজারে নারীদের উপর বিজিবি ও পুলিশের অভব্য পর্যায়ের হামলা ও প্রকাশ্য শ্লীলতাহানির খবর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার পরে বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্ত হামলার ঘটনা ঘটে।

এসময় উত্তেজিতভাবে সেটলাররা উস্কানীমূলকভাবে বিভিন্ন কার্যকলাপ করতে থাকে। জানা গেছে, ঘটনার দিন বিকালে উপজেলা এলাকায় একজন পাহাড়ি টমটম চালক বাজারের দিকে একজন বাঙালী নারী যাত্রীকে নেয়ার সময় কয়েকজন সেটলার বাঙালি উক্ত গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উক্ত বাঙালী নারী যাত্রীর মাথায় আঘাত লাগলে তিনি মারাত্মক আহত হন।

বিকালের দিকে উত্তেজিত সেটলারদের বেশ কয়েকজন বাস টার্মিনালের দিকে একটি মহেন্দ্র গাড়ির উপর এলোপাথাড়ি হামলা চালায়। গাড়ির ড্রাইভার নিজের জীবন বাঁচাতে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যান। পরে সেটলার যুবকরা উক্ত গাড়ি ভাঙচুর করার পরে পাশের ডোবা পুকুরে  গাড়িটি ফেলে দেয়।

লুঙুদু হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করার জন্য খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ বিকালের দিকে মহাজনপাড়াস্থ টং রেসটুরেন্টে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু খাগড়াছড়ির সার্বিক পরিস্থিতি হঠাৎ সাম্পদায়িকভাবে উত্তেজনাকর অবস্থায় থাকায় তাদের উক্ত কর্মসূচি বাতিল করা হয়। উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ি থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করার জন্য পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমাকে আহ্বায়ক করে উক্ত ত্রাণ সংগ্রহ কমিটি গঠন করা হয়।

সেটলার বাঙালি ছাত্র পরিষদের সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলক মিছিল
গতকাল বিকালের দিকে খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বর এলাকায় বেশ কয়েকজন উত্তেজিত সেটলার যুবককে প্ররোচিত করে মাঈনুদ্দীন নামে সেটলার বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতা উস্কানীমূলকভাবে মিছিল করে। দায়িত্বরত পুলিশ তাকে উত্তেজনাপূর্ণ মিছিল না করতে বললে সে উত্তেজনাকর শ্লোগান দিতে দিতে মিছিলটি মহাজনপাড়া হয়ে চেঙ্গীস্কয়ার পর্যন্ত গেলে পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশ মাঈনুদ্দীনকে সাম্প্রায়িক উস্কানীমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানোর জন্য শায়েস্তা করে বলে জানা গেছে।

আজ সকালর দিকে প্রাপ্ত এক খবরে জানা গেছে, পানছড়ি সদরে ইব্রাহিম নামে এক উগ্র সেটলার পাহাড়িদের মটরসাইকেল. সিএনজি বা যানবাহন পানছড়ি সদরে না আনতে নির্দেশ প্রদান করে। পরে পাহাড়ি ড্রাইভাররা তার প্রতিবাদ করলে উক্ত উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্ত হয়।

আজ বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়িতে সাপ্তাহিক হাটবাজার থাকলেও পাহাড়ি জনগণ বাজারে তেমন আসেনি। বাজার মেলেনি বলে জানা গেছে। আপার পেরাছড়া, মধুপুর ইত্যাদি পাহাড়ি অধ্যুষিত ছোটখাটো বাজারে পাহাড়িরা বাজারের পসরা সাজিয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক এক নারী কাউন্সিলর সিএইচটিনিউজ প্রতিবেদকের সাথে আলাপের সময় জানিয়েছেন, আগামী ১১ জুন পর্যন্ত খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি ঘোলাটে থাকবে বলে তিনি জেনেছেন। তিনি জানান, বাঙালি একজন শুভাকাঙ্খী জানিয়েছেন, ১১ তারিখের মধ্যে যেকোনো একটি ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা সাম্প্রদায়িক উস্কানীদাতাদের রয়েছে। সুতরাং, তিনি সবাইকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে অনুরোধ করেছেন। যাতে এই ধরণের কোনো ঘটনা না ঘটে তার জন্য পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের সার্বিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা গেছে আজ দুপুরে আটককৃত ৮ জন এইচডব্লিউএফ নেতা-কর্মী-সমর্থককে ম্যজিস্ট্রেট কোর্টে তোলা হয়। আদালত থেকে ৫ জনকে জামিন প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আদালত এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিজিবি-পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।
—————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More