২ ডিসেম্বরের তামাশা আর কত কাল চলবে?
এস. ত্রিপুরা ॥
২ ডিসেম্বর বর্তমানে যেন ‘মা দিবস’, ‘বাবা দিবস’, ‘হাত ধোওয়া দিবসের’ মতো একটি দিবসে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৭ সালের এ দিন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। সেই পর থেকে প্রতি বছর দুই পক্ষই চুক্তি স্বাক্ষরের এ দিনটি পালন করে আসছে।
এ বছর সরকার পার্বত্য চুক্তির ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। এতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ আরো অনেকের বাণী ছাপা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই’ ‘ঐতিহাসিক’ পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরকে ‘বিশ্ব ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি ‘শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা’ করলেও এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেননি, যা চোখে পড়ার মতো একটি ব্যতিক্রম। কারণ ইতিপূর্বে প্রতি বছর এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে এই অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নবায়ন করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে উঠেছিল। তাই সঙ্গত কারণে তার এই মামুলী বাণী পাঠ করে ‘অসহযোগ আন্দোলনকারীরা’ খুশী হবেন বলে মনে হয় না।
পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের বার্ষিকী পালনের প্রতিযোগিতা কেবল সরকার ও জেএসএস-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েন সেনাবাহিনীও দিনটি আরম্ভরের সাথে পালন করে থাকে। সেনাবাহিনীর ব্রিগেড ও জোন পর্যায়েও ‘শান্তির র্যালী’ বের করে দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের পর গত ১৮ বছরে বিভিন্ন সংঘাতে ৩-৪ শ লোকের প্রাণহানি, পাহাড়িদের বিরুদ্ধে দুই ডজনের মতো সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভূমি বেদখলসহ বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সত্বেও সেনাবাহিনীর দাবি চুক্তির ফলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে এসেছে। পার্বত্য চুক্তির এই হলো কমিক্যাল বা হাস্যকর দিক। আর এই চুক্তির ট্রাজেডির দিক হলো এই যে, যে সেনাবাহিনী এই চুক্তি লঙ্ঘন করে নতুন নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে চলেছে, যে সেনাবাহিনী পাহাড়িদের ভূমি বেদখল ও শান্তি হরণের জন্য দায়ি, সেই সেনাবাহিনীই উৎসবমুখর হয়ে চুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করে থাকে। জনগণের সাথে এ এক নিষ্ঠুর রঙ্গ ছাড়া আর কী হতে পারে! আসলে এসব দেখে মনে হয়, সরকার ও সেনাবাহিনীর কাছে পার্বত্য চুক্তি হলো কেবল সেলিব্রেট করার বিষয়, বাস্তবায়নের বিষয় নয়। এই চুক্তি যেন তাদের কাছে দ্বিতীয় বিজয় দিবস।
২ ডিসেম্বর সবই হয়: আনন্দ র্যালী হয়, উৎসব হয়, চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু শেষ বেলায় চুক্তি বাস্তবায়ন হয় না। প্রতারিত হয় সাধারণ নিরীহ শান্তিকামী জনগণ। আর ২ ডিসেম্বর পরিণত হয় এক মহা তামাশায়। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এই খেলা আর কত কাল চলবে?
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]
————————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।