তনু ধর্ষণ ও হত্যা ‘কল্পনা অপহরণ’ ঘটনারই পূনরাবৃত্তি
।। পারদর্শী।।
কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় সোহাগী জাহান তনু নামে ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে গত ২০ মার্চ। এ ঘটনা নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। সেনানিবাসের মতো একটি নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকায় এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কিভাবে ঘটলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তনু ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা নিয়ে কথাবার্তা না বলার জন্য সেনাবাহিনীর তরফ থেকে অনেককে নিষেধ করা হয়েছে। যা ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার মতলব ছাড়া কিছুই হতে পারে না।
রাষ্ট্রের একটি সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্পের এরিয়ার ভিতর এমন নৃশংস ঘটনা দেশের বিবেকবান মানুষ কিছুতেই মানতে পারছে না। স্বভাবতই সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড ও নারী তথা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
এখানে সংক্ষিপ্তভাবে বলা দরকার যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনাশাসনের আওতায় শাসিত হচ্ছে। সেনা নিপীড়ন-নির্যাতন যে কি ভয়াবহ সেটা পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগণই ভালো করে জানে। এখানে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ডজনের অধিক গণহত্যা হয়েছে, শত শত নারী লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। বর্তমানেও সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতন যেন নিত্য দিনের ঘটনা। এত কিছুর পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর অপরাধী সদস্যদের কোন শাস্তি হয়নি।
বলা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা চর্চার কেন্দ্র। এই চর্চা করতে গিয়ে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে যা ইচ্ছে তাই করে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষমতাশালী হয়ে তারা যে কোন জায়গায় আঘাত করতেও দ্বিধা করে না। তাই তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটিও এর থেকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিউ লাল্যাঘোনার নিজ বাড়ি থেকে সেনা কমান্ডার লে. ফেরদৌস কর্তৃক অপহৃত হয়ে এখনো তাঁর কোন খোঁজ মিলেনি। এ ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হলেও অপহরণকারী লে. ফেরদৌসের কোন বিচার-শাস্তি হয়নি। ঘটনা তদন্তের নামে রাষ্ট্র বরাবরই লুকোচুরি খেলা খেলে যাচ্ছে। অন্যদিকে অপহরণের সাথে জড়িত লে. ফেরদৌসকে প্রমোশন দিয়ে চাকরিতে বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা খুন, ধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। কুমিল্লা সেনানিবাসের ভিতর তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের কল্পনা অপহরণ ঘটনারই পুনরাবৃত্তিই বলা চলে। যদি লে. ফেরদৌসের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তাহলে সেনানিবাস এলাকায় এ ধরনের নৃশংস ঘটনা হয়তো ঘটতো না।
কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনাটি যেভাবে ধামাচাপা দেয়ার জন্য রাষ্ট্র তথা সরকার তৎসময় হতে আজ পর্যন্ত তৎপর রয়েছে। একইভাবে তনু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটিও সেনাবাহিনী ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে, যা বিভিন্ন অভিযোগ থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে। কাজেই, তনু ধর্ষণ ও হত্যার সঠিক বিচার তখনই সম্ভব হবে, যখন কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌসসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর অপরাধী সদস্যদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত হবে।
[মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখাগুলো লেখকের নিজস্ব মতামতই প্রতিফলিত]
———————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।