পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ১৬তম কাউন্সিল সম্পন্ন

0

খাগড়াছড়ি : “বীর শহীদদের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আগুয়ান সৈনিক হোন, সরকার, রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও দালাল-জুম্ম রাজাকারদের জাতীয় অস্তিত্ব ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের লৌহপ্রাচীর দূর্গ গড়ে তুলুন” এই আহ্বানে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ১৬তম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে।  এতে অমল ত্রিপুরা সভাপতি ও সমর চাকমা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

আজ শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এক আলোচনা সভার মাধ্যমে এই কাউন্সিল সম্পন্ন হয়।

আলোচনা সভা শুরুতে গত ১৮ আগস্ট স্বনির্ভর বাজারে ও পেরাছড়ায় সেনা-প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সংষ্কার-নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় নিহত পিসিপি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শহীদ তপন চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক শহীদ এলটন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সহ-সভাপতি শহীদ পলাশ চাকমাসহ ৭ জনের এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সভায় পিসিপি’র জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও দপ্তর সম্পাদক সমর চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুপেশ চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী এন্টি চাকমা প্রমুখ।

বক্তারা সম্প্রতি স্বনির্ভর বাজারে সংঘটিত হত্যাকা-ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এখানকার প্রশাসন জেএসএস(সংস্কার) ও নব্য মুখোশ সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। ফলে সন্ত্রাসীরা মিঠুন-তপন-এলটন-পলাশ ও সূর্য বিকাশ চাকমার মত রাজনৈতিক ও সমাজকর্মীদের একের পর এক হত্যা করছে। সাধারণ মানুষও তাদের এই নৃশংসতা থেকে বাদ যাচ্ছে না। তারা সাধারণ জনগণকে অপহরণসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করছে। সেনা-প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা থাকায় সন্ত্রাসীদের কাছে জনগণ জিম্মি হয়ে পড়েছে।

তারা অভিযোগ করে বলেন, সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকা-ের পরও জনগণের নিরাপত্তায় প্রশাসনের কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে জনগণ এখন প্রশাসনের প্রতি কোন প্রকার আস্থা রাখতে পারছে না।

দুই সপ্তাহ পার হওয়ার পরও স্বনির্ভর-পেরাছড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার না করায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে এ হত্যাকা- সংঘটিত হওয়ার পরও পুলিশ এখনো খুনীদের গ্রেফতার করতে না পারা বড়ই রহস্যজনক।

বক্তারা রাষ্ট্রীয়-সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে সংস্কার-মুখোশদের সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় জনগণ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে উদ্ভুত সকল পরিস্থিতির জন্য সরকার-প্রশাসনকে দায়ি থাকতে হবে।

বক্তারা বলেন, শাসকগোষ্ঠী এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তা তাদের স্বার্থ আদায়ের জন্য পাহাড়ি জনগণকে ধ্বংসের নীলনক্সা বাস্তবায়ন করছে। তারা বিভেদ সৃষ্টি করে সংঘাত জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটার জন্য মরিয়া হয়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এই ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী ধর্ষণ, খুন-গুম-অপহণ ও ভূমি বেদখলের মতো ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। সরকার-শাসকগোষ্ঠীর এই জাতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ, সকল সামাজিক-রাজনৈতিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।

বীর শহীদদের আত্মবলিদান কখনো বৃথা যেতে পারে না–এমন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তাদের এই আত্মবিলদানকে সার্থক করতে হবে।

বক্তারা অবিলম্বে স্বনির্ভর-পেরাছড়ায় পিসিপি-ডিওয়াইএফ নেতাসহ ৭ জনকে হত্যা ও ইউপিডিএফ’র নেতা মিঠুন চাকমা হত্যার ঘটনায় জড়িত সংষ্কার-নব্য মুখোশ বাহিনী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয়-সেনা মদদদান বন্ধের দাবি জানান।

আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে অমল ত্রিপুরাকে সভাপতি, সমর চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও নিকেল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়।

নতুন কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান এবং নতুন কমিটির উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা।
——————-
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More