আগামীকাল খাগড়াছড়িতে পিসিপি’র মাতৃভাষায় প্রতীকী ক্লাশ ও ছাত্র সমাবেশ
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি: ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালুসহ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে আগামীকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বৃহস্পতিবার সকাল ১০.৩০টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর মাঠে মাতৃভাষায় প্রতীকী ক্লাশ ও ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস চেতনার সংগ্রামকে বেগবান করতে পিসিপি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে খাগড়াছড়ি জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করবেন।
উক্ত প্রতীকী ক্লাশ ও ছাত্র সমাবেশে অংশগ্রহণ করে নিজ নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে জোরদার করার জন্য ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পিসিপি।
পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫দফা দাবি হচ্ছে- ১. পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিত করা, ২. জাতিসত্তার প্রতি যে কোন অবমাননাকর বক্তব্য পাঠ্য পুস্তক থেকে বাদ দেওয়া, ৩. পাহাড়ি জাতিসত্তার সঠিক ও সংগ্রামী রাজনৈতিক ইতিহাস সম্বলিত পুস্তক পাবর্ত্য চট্টগ্রামের স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করা, ৪. বাংলাদেশের সকল জাতিসত্তার সংক্ষিপ্ত সঠিক তথ্য সম্বলিত পরিচিতিমূলক পুস্তক বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রমে অর্ন্তভুক্ত করা ও ৫. পার্বত্য কোটা বাতিল করে পাহাড়ি কোটা চালু করা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এরপর ২০০০ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল (বিএমএসসি), ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম (টিএসএফ), বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস), সান্তাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (সাসু) এবং ওঁরাও ছাত্র সংগঠন একত্রিতভাবে ঢাকায় এক সমাবেশের মাধ্যমে সকল জাতিসত্তার স্ব-স্ব মাতৃভাষার স্বীকৃতির দাবি জানায়। পরে ২০০২ সালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি জানিয়ে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান ও শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুকের কাছে এবং ২০০৩ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে। এরপর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে পিসিপিকে চিঠি দেওয়া হলেও দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এসব দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে ২০০৯ সালে খাগড়াছড়িতে বিশাল ছাত্র সমাবেশ, ২০১১ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ক্লাশ ধর্মঘট পালন করা হয় এবং দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করা থেকে বিরত থাকার কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়, যা এখানো অব্যাহত রয়েছে। সে সময় ক্ষমতাসীন সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর জন্য আশ্বাস প্রদান করেন। এরপর ২০১৩ সালে সরকারের পক্ষ থেকে ৬টি জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর জন্য ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকার এ ঘোষণা বাস্তাবায়ন করেনি।
পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
——————-
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।