আশীষ চাকমার এখনো খোঁজ মেলেনি : জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জেলা প্রশাসক ও তদন্ত কমিটির বরাবরে অভিযোগপত্র দাখিল
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
গত ১৭ এপ্রিল‘১১ সেটলার হামলার পর জালিয়া পাড়া থেকে নিখোঁজ হওয়া আশীষ চাকমার এখনো কোন খোঁজ মেলেনি। সেটলাররা তাকে হত্যা করে গুম করে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশীষ চাকমা (১৯) রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বালুখালী গ্রামের দেবপ্রিয় চাকমার ছেলে। সে চট্টগ্রামের শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের ছাত্র। চাকমা তার ছেলে নিখোঁজ হওয়া বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জেলা প্রশাসক ও রামগড় ও মানিকছড়িতে সংঘটিত ঘটনার তদন্ত কমিটির বরাবরে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া তিনি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বরাবরে মানবিক সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন। ঘটনার ৯দিন পরও আশীষ চাকমার কোন খোঁজ না পেয়ে পরিবারের মধ্যে হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে।
গতকাল ২৪ এপ্রিল ঘটনার তদন্ত কমিটি ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের বরাবরে দাখিল করা অভিযোগপত্রে দেবপ্রিয় চাকমা বলেন, আশীষ চাকমা বিগত ১৭ এপ্রিল ‘১১, রবিবার, বিকাল ২:১৫টার সময় চট্টগ্রাম হতে দিঘীনালাগামী শান্তি পরিবহনে (গাড়ী নং-চট্টমেট্রো ব-১১০২৬৩, গাড়ির চালকের নাম মিন্টু ড্রাইভার এবং সহকারী নাম নজরুল) যাত্রী হিসেবে উঠেছিলেন৷ এ সময় গাড়িতে আরো ৮/৯ জন পাহাড়ি যাত্রী ছিল৷ গাড়িটি রামগড় থানাধীন জালিয়া পাড়া নামক স্থানে পেঁৗছলে ৩০/৪০ জনের একদল সেটলার গাড়িটিকে গতিরোধ করে আশীষ চাকমাসহ ৮/৯ জন পাহাড়িকে জোরপূর্বক গাড়ি থেকে নামিয়ে ধারালো অস্ত্র, দা, কিরিচ, বল্লম দিয়ে আঘাত করতে করতে রাস্তার পশ্চিম দিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়৷ সে সময় ঘটনার অদুরে নিরাপত্তা বাহিনী নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে৷ এ সময় ঘটনার প্রত্যদর্শী তপন চাকমা গাড়ির পিছনের সীটে থাকায় ভাগ্যক্রমে প্রাণে রক্ষা পায়।
অভিযোগপত্রে তিনি আশীষ চাকমা সহ অপরাপর নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার বা সন্ধান প্রদানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
উক্ত অভিযোগপত্র পাওয়ার পর খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: আনিসুল হক ভূঁইয়া এত দেরিতে আবদেন করায় ‘এতদিন পর কতকিছু হয়ে যেতে পারে‘ বলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বলে দেবপ্রিয় চাকমা জানিয়েছেন৷ এ সময় দেবপ্রিয় চাকমা জেলা প্রশাসককে জানান যে, এর আগে প্রশাসনের প থেকে তাকে ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে অভিযোগ দাখিল করতে বলা হয়েছিল৷এবং তা না হলে নিখোঁজ হওয়া বিষয়টি আবেদন হিসেবে গ্রহণ করা হবে না বলে জানানো হয়৷ তাই বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য আবেদন জমা দিতে দেরি হয়ে গেছে।
উল্লেখ্য যে, গত ১৭ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার শনখোলা পাড়া এলাকায় সেটলাররা পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করতে গেলে পাহাড়িরা প্রতিরোধ করে। এ ঘটনার জের ধরে বড় পিলাক থেকে বাঙালিরা গিয়ে পাহাড়িদের বাড়ি-ঘরে অগি্ন সংযোগ করে৷ এ সময় সেটলাররা জালিয়া পাড়ায় যাত্রীবাহী বিভিন্ন গাড়ি আটকিয়ে পাহাড়িদের উপর হামলা চালায়৷ এতে চট্টগ্রাম থেকে বাড়ী ফেরার পথে জালিয়া পাড়ায় সেটলারদের হামলার শিকার হয়ে নিখোঁজ হন আশীষ চাকমা।