এইচএসসি পরীক্ষার্থী তুষার চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় তিন সংগঠনের সংহতি সমাবেশ

0

ঢাকা : খাগড়াছড়িতে সেনা মদদপুষ্ট জেএসএস সংস্কারবাদী সন্ত্রাসী কর্তৃক এইচএসসি পরিক্ষার্থী তুষার চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে  ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবিতে ঢাকায় সংহতি সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)।

আজ শুক্রবার (২২ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের আগে পল্টন মোড় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

“পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় মদদে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বন্ধ কর” এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত সংহতি সমাবেশে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমার সভাপতিত্বে ও এইচডব্লিউএফ এর সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক ‍যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা ও সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, নারী সংহতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড: জান্নাতুল মরিয়ম তানিয়া, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম এম পারভেজ লেলিন, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক আতিক অনিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয়দেব ভট্টাচার্য, ল্যাম্পপোষ্টের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ সুলতানা লিসা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি সৈকত আরিফ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক সজল বাড়ৈ।

থুইক্যচিং মারমা ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকান্ডে নিহতদের স্মরণ ও শোকার্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেন, আওয়ামী সরকার উন্নয়নের বুলি প্রচার করলেও গত ২০ ফেব্রুয়ারি চক বাজারের ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ড প্রমাণ করে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের কথা বলে শাসকগোষ্ঠী এভাবে অপপ্রচার, মিথ্যাচার  করে যাচ্ছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়েও মিথ্যাচার করে। গত ১৯ ফেব্র্রুয়ারি খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র ও এইচএসসি পরিক্ষার্থী তুষার চাকমাকে সেনা মদদপুষ্ট জেএসএস সংস্কারবাদী সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করলে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিডিয়াতে দুই পক্ষের গোলাগুলি নামে চালিয়ে দেয়া হয়। শাসকগোষ্ঠী তাদের অনুচরদের বাঁচানোর জন্য মিডিয়াকে নগ্নভাবে ব্যবহার করে।

তুষার হত্যার নিন্দা জানিয়ে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মীদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। এতে সাধারণ জনগণ, ছাত্ররাও রেহায় পাচ্ছে না। তুষার চাকমা হত্যা তারই অংশ।

নারী সংহতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড: জান্নাতুল মরিয়ম তানিয়া বলেন, এদেশের অগণতান্ত্রিক সরকার সংখ্যালঘুদের একের পর এক নির্যাতন চালিয়ে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। যার সর্বশেষ শিকার তুষার চাকমা। বাংলাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আমরা মুখোশ ও জেএসএস সংস্কারবাদীদের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন করে অপহৃত মন্টি ও দয়াসোনাকে জীবিত ফিরিয়ে এনেছি। তুষার হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য একইভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এম এম পারভেজ লেলিন বলেন, দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র নেই। জনগণের হাতে প্রকৃত ক্ষমতা থাকলে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা নিপীড়ন হত না।

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক আতিক অনিক বলেন, ভাষার মাস চলছে। ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি শহীদের সম্মান জানাতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন। কিন্তু হাস্যকর হলেও সত্য, তারা এদেশে বসবাসরত বাঙালি ভিন্ন অন্যান্য জাতিসত্তার ভাষার স্বীকৃতি দিতে পারেনি। যা সত্যিই লজ্জার।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয়দেব ভট্টাচার্য বলেন, শাসকগোষ্ঠী যেকোন জাতীয় মুক্তির আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে সুবিধাবাদী একটা অংশকে বাগিয়ে নিয়ে প্রকৃত আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। এভাবে তাদের মধ্যে সংঘাত বাঁধিয়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত নামে অভিহিত করে প্রকৃত আন্দোলনকে দুর্বল করার চক্রান্ত করে। আমাদের ভেবে দেখতে হবে, এই সুবিধাবাদী একটা অংশকে দিয়ে এই দ্বন্দ্ব কারা তৈরি করছে?

ল্যাম্পপোষ্টের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ সুলতানা লিসা বলেন, পাহাড় ও সমতলে শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে  বিচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে ঠিকে থাকা সহজ হবে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

তুষার হত্যার প্রতিবাদে সংহতি সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করে ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি সৈকত আরিফ বলেন, ২০১০ সালে নিমতলি ঘটনার পর শাসকরা বলেছিল তারা পুরান ঢাকায় কোন রাসায়নিক কারখানা রাখবে না। কিন্তু ২০১৯ সালে চকবাজার অগ্নিকান্ডের মাধ্যমে প্রমানিত হল তা কীভাবে জনগণকে ধোঁকা দিয়েছে। শাসকরা তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য পুরান ঢাকায় এইসব রাসায়নিক কারখানা ঠিকিয়ে রেখেছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের স্কুল বিষয়ক সম্পাদক সজল বাড়ৈ বলেন, আমরা লড়াই করছি মানব মুক্তির জন্য, আমরা লড়াই করছি মাদকের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আজকে তুষার চাকমা হত্যা নতুন নয়। এটা পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় অত্যাচারের পরম্পরা।

সভাপতির বক্তব্যে বিপুল চাকমা বলেন, সন্ত্রাসীরা প্রশাসনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে এই হত্যাকান্ড চালানোর এতোদিন পরও অপরাধীদের গ্রেফতারে প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এতে প্রমানিত হয় এই হত্যাকাণ্ডের সাথে প্রশাসনের যোগসাজশ রয়েছে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর আহ্বায়ক বহ্নি শিখা জামালী ও ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর কেন্দ্রীয় নেতা কনক জ্যোতি চাকমা।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে তুষার চাকমা হত্যাকাণ্ড ও চক বাজারের অগ্নিকান্ডের ঘটনা বিচার বিভাগীয় কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More