ফেসবুক থেকে

এই প্রতিবাদ জারি থাকুক: য়েন য়েন

0

অনলাইন ডেস্ক:

এই আন্দোলন কেবলমাত্র ম্রো জাতির ভূমি রক্ষার, জীবন জীবিকা জীবনাচার রক্ষার, প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলন নয়। এটি আপনার আমার আমাদের সকলের আন্দোলন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ন্যায্য অবস্থান। এই প্রতিবাদ জারি থাকুক। দেশের নাগরিকদের উপর জুলুমের অবসান হোক।

৭ ফেব্রুয়ারি নাইতং পাহাড়ের আর তার আশেপাশের প্রায় ৪০টি ম্রো গ্রামের ১২০০ এর অধিক মানুষ দীর্ঘ ২২ কিমি একটানা হেঁটে তাদের চিম্বুক থেকে বান্দরবান অভিমুখে লং মার্চ কর্মসূচী সফল করেছেন। জমায়াতের জায়গা থেকে তারা কিন্তু গন্তব্য পর্যন্ত হেঁটেছেন পুরোটা রাস্তা। বহুল প্রচলিত লং মার্চ এর কিছু দূর হাঁটা, কিছু দূর যানবাহনে চড়ে যাত্রা, এরকম নয়। ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গিয়ে মাত্র ৫ ঘন্টায় পৌঁছেছেন বান্দরবানে রাজার মাঠে। শৃংখলার নূন্যতম কোন ব্যতয় ঘটেনি।

যানবাহনের যাওয়ার রাস্তা ছেড়ে দিয়ে রাস্তার একপাশে হেঁটেছেন। পুলিশের বাঁধার মুখে তারা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে তা বুঝিয়ে বলেছেন, তিনিও প্রত্যুত্তরে তাদের শৃঙ্খলার প্রশংসা করেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে, শৃঙ্খলার সাথে, দূপুরের প্রচন্ড রোদে এতদূর পাহাড়ি রাস্তা হেঁটে প্রতিবাদ জানানোর যে উদাহরণ তারা সৃষ্টি করলেন, তা অভাবনীয়।

সেদিন পুলিশ ভাইয়েরা যে শান্তিপূর্ণ এই মার্চ-এ কোন প্ররোচনা ছাড়াই মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করার চেষ্টা করেননি, সেটিও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত পুলিশবাহিনীর জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে অনেকদিন। রাষ্ট্রের ‘লাঠিয়াল বাহিনী’ বলে তাদের যে দুর্নাম রয়েছে, তা এ ধরণের উদাহরণ সৃষ্টি করে আর প্রতিটি পদে এর চর্চা বহাল রেখে একদিন ঘুচানো সম্ভব হবে। ধন্যবাদ, সেদিন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের, প্রাপ্য।

রাস্তার যে পাশ দিয়ে পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা হেঁটে গেছেন, সে পাশে কিছু দূর পর পর ছেঁড়া চপ্পল পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকের পায়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল বলে স্যান্ডেল হাতে ধরে আগুন গরম পিচের রাস্তায় তারা খালি পায়ে হেঁটেছেন। ম্রো ছাত্র যুবক তরুণদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হেঁটেছেন, শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেছেন মারমা ছাত্র যুবক তরুণেরা। ক্লান্তি ঝেড়ে সামনে, পাশে পিছে হেঁটে অগ্রসর হয়েছেন। প্রাণের সাথে মিলিয়ে প্রাণ তারা এগিয়েছেন।

মাঝপথে রাস্তার দুই পাশের গ্রামগুলোতে পরিশ্রান্ত তৃষ্ণার্ত অভুক্ত মানুষদের পানি আর নাস্তা সরবরাহ করেছেন বম গ্রামবাসী, বম তরুণ তরুণীরা। বম গ্রামবাসীরা প্রতিটি ঘরে ঘরে ভাত রান্না করেছেন, একযোগে সকলে মিলেও রান্না করেছেন। ১২০০ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়ার বিশাল কর্মযজ্ঞে বম তরুণ তরুণীর সাথে যোগ দিয়েছিলেন একদল খিয়াং তরুণেরা। সকলে মিলে রেঁধেছেন, বেড়েছেন, খাবার পৌঁছে দিয়েছেন গন্তব্যে, পদযাত্রায় অংশগ্রহনকারীদের হাতে হাতে তুলে দিয়েছেন খাবার। ভাবলেই শিহরণ জাগে।

ম্রো আন্দোলনকারীরা বলছেন ম্রো জাতির জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। তা অনস্বীকার্য তো বটেই। কিন্তু এই লং মার্চ এর চেয়েও বড় কিছু বিশাল কিছু অর্থবহ একটি বার্তা আমাদের সকলকে দিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর একাত্ম হওয়া, একসাথে একযোগে বিভিন্নভাবে আন্দোলনে সামিল হওয়া, এই যে কমিউনিটি স্পিরিট, এই যে জনগণের অসীম ক্ষমতা, তা তারা আমাদের দেখিয়েছেন।

এই আন্দোলন কেবলমাত্র ম্রো জাতির ভূমি রক্ষার, জীবন জীবিকা জীবনাচার রক্ষার, প্রাণ প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলন নয়। এটি আপনার আমার আমাদের সকলের আন্দোলন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ন্যায্য অবস্থান। এই প্রতিবাদ জারি থাকুক। দেশের নাগরিকদের উপর জুলুমের অবসান হোক।

  • লেখাটি Yan Yan এর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেওয়া।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More