কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আজ ১১ জানুয়ারি শুক্রবার খাগড়াছড়িতে বিভে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশ থেকে বক্তারা কল্পনা অপহরণ বিষয়ে সিআইডি‘র দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্ত ও ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভরস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাদ্রী চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নিকোলাস চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আপ্রুসি মারমা ও জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির অর্থ সম্পাদক সুকৃতি জীবন চাকমা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক অংকন চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
বক্তারা কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে সিআইডির দাখিল করা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এ রিপোর্ট ভণ্ডামী ছাড়া আর কিছুই নয়। তদন্তের নামে এ এক প্রহসন। সিআইডি‘র এ রিপোর্টে চিহ্নিত অপহরণকারীদের সম্পূর্ণ আড়াল করা হয়েছে। যার ফলে কল্পনা চাকমা অপহরণের ন্যায় বিচার ভুলণ্ঠিত হওযার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, অপহরণের সাড়ে ষোল বছর পরও কল্পনা চাকমাকে উদ্ধার করতে না পারা ও অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনার সাথে জড়িত সেনা কমান্ডার লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের বিচার না হওয়ার কারণে আজ পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের উপর যৌন সহিংসতা বহু গুণ বেড়ে গেছে। যে ঢাকঢোল পিটিয়ে চুক্তি করা হয়েছে, যাকে শান্তিচুক্তি আখ্যা দেয়া হয়েছে, সেই চুক্তির পরও নারী ধর্ষণ, খুন ও যৌন হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতি মাসে তিন পার্বত্য জেলার কোথাও না কোথাও ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। গত বছর কমপে ১৫ জন পাহাড়ি নারী নিরাপত্তা বাহিনী ও সেটলার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
বক্তারা বলেন, শুধু কল্পনা অপহরণ ঘটনা নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবৎ ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘটনার সাথে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জড়িত রয়েছে। কিন্তু সরকার প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার কারণে আজ পর্যন্ত কোন ঘটনারই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি।
বক্তারা কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য নারী সমাজ সহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লেঃ ফেরদৌস ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, আগামী ১৩ জানুয়ারী সিআইডির তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যম যদি অপহরণকারীদের রা করা হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না। প্রয়োজনে আবারো কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে বক্তারা সরকারকে হুঁশিয়ার করেন।
সমাবেশ শেষে স্বনির্ভরস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে শান্তি নিকেতন হয়ে আবার স্বনির্ভরে এসে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন (১১ জুন মধ্যরাত) রাঙামাটির বাঘাইছড়ি থানাধীন নিউ লাল্যাঘোনা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে কজইছড়ি ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার লেঃ ফেরদৌস ও তার সশস্ত্র সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত হন। ২০১০ সালের ২১ মে বাঘাইছড়ি থানার তৎকালীন এস আই ফারুক আহম্মদ কল্পনা চাকমা অপহরণ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। রিপোর্টে তিনি অপহরণকারীদের সনাক্ত করতে ও কল্পনা চাকমার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা দিতে ব্যর্থ হন। মামলার বাদী কল্পনা চাকমার ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজী আবেদন জানালে আদালত সিআইডি দ্বারা তদন্ত করানোর নির্দেশ দেন।
এরপর সিআইডির মোঃ শহীদুল্লাহ গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর কল্পনা চাকমার অপহরণ বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। এতে কল্পনা চাকমার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়।#