কোচিংবাজ শিক্ষকদের পার্বত্য জেলায় বদলির সিদ্ধান্ত

0

সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক
gggসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শূন্যপদে নতুন নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়ে এখন শিক্ষক বদলির মাধ্যমে সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যাঁরা কোচিংবাজ শিক্ষক এবং যেসব শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে একই প্রতিষ্ঠানে আছেন তাঁদের চিহ্নিত করে বদলির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে কোচিং ও নানা অন্যায়ের সঙ্গে জড়িতদের তিন পার্বত্য জেলায় ও অন্যদের দেশের প্রত্যন্ত উপজেলায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল রবিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দেশে ৩১৯টি সরকারি বিদ্যালয়ের এক হাজার ৫৮০টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। শহরাঞ্চলের বাইরের স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকট প্রকট। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ের স্কুলগুলোর অবস্থা করুণ। ওই সব স্কুলে লেখাপড়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সবচেয়ে জটিল অবস্থা তিন পার্বত্য জেলার স্কুলগুলোতে। ওই অঞ্চলের কোনো কোনো স্কুল মাত্র দুজন শিক্ষক নিয়েও চলছে। এর মধ্যে অনেক স্কুলে ডাবল শিফট পর্যন্ত চালু করা হয়েছে। কিন্তু ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের স্কুলের অবস্থা এর ঠিক বিপরীত। শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে শতভাগ শিক্ষক তো রয়েছেনই, কোনো কোনো স্কুলে সংযুক্তি নিয়ে প্রয়োজনের বেশি শিক্ষকও আছেন। রাজধানীর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এমনও শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা ১৫-১৮ বছর ধরে চাকরি করছেন। আবার কিছুসংখ্যক শিক্ষককে রাজধানীর ভেতরেই এক স্কুল থেকে আরেক স্কুলে বদলি করা হয়েছে। ফলে স্কুলে কোচিং ও ভর্তি ব্যবসাসহ অন্যান্য বিষয়ে যে সিন্ডিকেট তাঁরা গড়ে তুলেছেন, তা বহাল তবিয়তেই রয়েছে। তাঁরা বছরের পর বছর অবস্থান করে সেখানে এক প্রকার ঘরবাড়ি খুলে বসেছেন। নাগরিক সুবিধা ভোগের পাশাপাশি কোচিং-বাণিজ্যের কারণে তাঁরা কখনোই শহরের বাইরের স্কুলে যেতে চান না। যখনই কোনো শিক্ষককে এক প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়, তখনই প্রভাবশালীদের পক্ষ থেকে চাপ আসে। ফলে এ উদ্যোগ অনেক ক্ষেত্রেই ভেস্তে যায়। নতুন পদ সৃষ্টির একাধিক উদ্যোগও সফল হয়নি। শূন্য পদে নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিধিমালা তৈরি না হওয়ায় পিএসসি নতুন নিয়োগে সাড়া দেয়নি।

গতকালের বৈঠক প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদ জানান, দেশের বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রচুর সংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। নিয়োগের মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণে যেহেতু বিলম্ব হতে পারে, তাই অন্তর্বর্তীকালীন একটি পন্থা হিসেবে বদলির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পাঁচটি সুনির্দিষ্ট নীতির ভিত্তিতে বদলির মাধ্যমে বিদ্যমান শিক্ষকদের দিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি আরো জানান, দু-চার দিনের মধ্যেই বদলি কার্যক্রম শুরু হবে এবং শিক্ষক সংকটে ভোগা বিদ্যালয়গুলো নতুন শিক্ষক পাবে।

গতকালের বৈঠকে যেসব নীতিমালার ভিত্তিতে শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো হলো- একই প্রতিষ্ঠানে ১৫-২০ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন এমন শিক্ষকদের চিহ্নিত করে বদলি, শতভাগ শিক্ষক আছেন এমন প্রতিষ্ঠানে যাঁরা কোচিং-বাণিজ্যে জড়িত তাঁদের পার্বত্য অঞ্চলে ও উপজেলা পর্যায়ে বদলি, শিক্ষার্থী কম কিন্তু শতভাগ শিক্ষক আছেন এমন প্রতিষ্ঠানের ৫ শতাংশ শিক্ষককে বদলি, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী নেই এমন স্কুলে যাঁরা সংযুক্ত আছেন তাঁদের বদলি এবং যাঁরা কখনো মাঠপর্যায়ে চাকরি করেননি তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ মেয়াদের শিক্ষকদের উপজেলা পর্যায়ে বদলি করা হবে।

৩১৯টি সরকারি বিদ্যালয়ের এক হাজার ৫৮০টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে দুটি বিদ্যালয় হলো নবপ্রতিষ্ঠিত। পুরনো ৩১৭টি বিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলায় ২৩০টি, ইংরেজিতে ২১০, গণিতে ১১৫, ভৌতবিজ্ঞানে ১৬৩, সামাজিকবিজ্ঞানে ৯৮, জীববিজ্ঞানে ১৫০, ব্যবসায় শিক্ষায় ১২০, ভূগোলে ৯৫, ইসলাম ধর্মে ১২০, কৃষিতে ৬১, শারীরিক শিক্ষায় ৮০, চারুকলায় ৯০ এবং দুটি নতুন বিদ্যালয়ে ৪৮টি পদ শূন্য রয়েছে।

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More