কোটা পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রামে পিসিপি’র সংবাদ সম্মেলন : বিক্ষোভ কর্মসুচি ঘোষণা
চট্টগ্রাম : দেশে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শেণীর সরকারী চাকুরীতে সংরক্ষিত ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসুচি ঘোষণা করেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা যৌথভাবে উক্ত সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পিসিপি চবি শাখার সভাপতি সুনয়ন চাকমা।
তিনি বলেন, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত, অযৌক্তিক, বাস্তবতাবিবর্জিত ও সরকারের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’
পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীগুলোকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কোটা ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দেশের পশ্চাদপদ সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে শিক্ষাদীক্ষা ও চাকুরীসহ উন্নয়ন সূচকে পেছনে রেখে আগমী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে রুপান্তরিত করার সরকারের স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বরং দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক করতে হলে সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে সবদিক দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে এবং এজন্য দরকার সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা।’
কোটা সংস্কার কমিটির সমালোচনা করে পিসিপি নেতা বলেন, ‘মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও কোটা সংস্কার কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছেন, তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও অনেক অগ্রসর হয়েছে। অথচ কোটা সংস্কার কমিটি দীর্ঘ পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিবেদনে গত ১০ বছরের বিসিএসের যে তথ্য তুলে ধরেছে সেখানে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর’ কোটা ৫% এর জায়গায় মাত্র ১.১৭% পূরণ হয়েছে দেখানো হয়েছে।’ যদি তাই হয়, তাহলে কীভাবে তিনি (মন্ত্রীপরিষদ সচিব) বলেন যে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অনেক অগ্রসর হয়েছে এবং তাদের জন্য আর কোটার দরকার নেই? তার নেতৃত্বাধীন কমিটির দেয়া পরিসংখ্যানই তার ‘অগ্রসর হওয়ার’ দাবিকে খারিজ করে দেয়।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পাহাড় ও সমতলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের সাথে কোনো প্রকার আলোচনা ব্যতিরেকে তাঁদের জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা বাতিলের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে এবং এ সিদ্ধান্ত ‘সংবিধানের ২৩ক, ১৯, ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।’
সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত কোটা ব্যবস্থার কল্যাণে পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিগুলো স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের এই অগ্রসরতা তাদেরকে দেশের অন্যান্য অগ্রসর জনগোষ্ঠীর সাথে সমকক্ষ অবস্থানে নিয়ে এসেছে, যাতে এই কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে নেয়ার যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন হয়। বরং দেখা যায় কোন কোন জাতিগোষ্ঠী শিক্ষা, চাকুরী ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে, কোন কোন জাতিগোষ্ঠী বলা যায় কেবল ইদানিং আধুনিক শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোগী ও আগ্রহী হয়েছে। তাই সরকারী চাকুরীতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হলে তাদের এই অগ্রগতি দারুণভাবে বাধাগ্রস্থ হবে এবং এতে দেশের জনগণের একটি বড় অংশ চিরকাল পেছনে পড়ে থাকবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সরকারি চাকুরীর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাহাড় ও সমতলের অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীদের জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা পুনর্বহাল ও তা যথাযথ বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে-
১২ অক্টোবর ২০১৮, শুক্রবার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম শহরের চেরাগী পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।
১৪ অক্টোবর ২০১৮, রবিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মানববন্ধন।
১৬ অক্টোবর ২০১৮, মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ।
সংবাদ সম্মেলন থেকে পিসিপি’র নেতৃবৃন্দ কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ঘোষিত কর্মসুচিতে দেশের সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, লেখক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক তথা সকল স্তরের জনগণের সাহায্য ও সমর্থন কামনা করেন এবং এসব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন পিসিপি’র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক অর্পন চাকমা, সহ-তথ্য প্রচার সম্পাদক ত্রিরত্ন চাকমা, পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি হ্লাচিংমং মারমা ও সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা প্রমুখ।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।