খাগড়াছড়িতে কয়েকটি সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন : সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিতর্কিত অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবি ও পার্বত্য তিন এমপিকে পদত্যাগের আহ্বান

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিতর্কিত অনুচ্ছেদ বাতিলের দাবি জানিয়েছে খাগড়াছড়ির কয়েকটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন। তারা পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের সময় তিন পার্বত্য জেলার গণমানুষের দাবী ও স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটির তিন সংসদ সদস্যকে সংসদ ও দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন। আজ ৯ জুলাই শনিবার বিকেলে খাগড়াছড়ির চন্দনপতি কমিউনিটি সেন্টারে জেলার বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবী জানানো হয়

সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি অনন্ত বিহারী খীসা ওজুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল বক্তব্য রাখেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, জুম্ম শরণার্থী কল্যান সমিতির সভাপতি প্রভাকর চাকমা, জেলা হেডম্যান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ প্রীতি চাকমা, মারমা সংগঠন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কংচাইরী মাষ্টার, জেলা কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি রনিক ত্রিপুরা, জুসাস এর সাধারণ সম্পাদক উদয় জীবন চাকমা, উপজাতীয় ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রবি শংকর তালুকদার ও সমাজ উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বিনোদ বিহারী চাকমা প্রমুখ।

বাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকার তড়িঘড়ি করে গত ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধী বিল পাশ করে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, হাজং, সাঁওতাল সহ ভিন্ন ভাষাভাষী অন্যান্য জাতিগুলোকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দিয়ে তাঁদেরকে সম্পুর্নভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৬নং অনুচ্ছেদে “বাংলাদেশেল জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী হিসেবে পরিচিত হইবেন” প্রতিস্থাপন করে দেশের বসবাসরত বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতিসমূহের ওপর বাঙালী জাতীয়তা চাপয়ে দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের আলাদা পরিচয় রয়েছে। আমরা আমাদের নিজস্ব জাতীয় পরিচয় নিয়েই পরিচিত হতে চাই। আমরা জাতি হিসেবে বাঙালি নই। আমাদেরকে জোর করে বাঙালি বানানোর অপচেষ্টা কখনো মেনে নেয়া হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরো বলেন, সংশোধিত সংবিধানে একদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, অপরদিকে একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কোন রাষ্ট্রধর্ম থাকতে পারে না। একটি বিশেষ ধর্মকে রাষ্ট্র ধর্ম করার এ অনভিপ্রেত মধ্যযুগীয় ব্যবস্থার ফলে দেশের অন্যান্য ধর্মসমূহকে অধস্তন পর্যায়ে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এসব ধর্মাবলম্বীগণকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হয়েছ। এটা রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতার ঘোষণা ছাড়া আর কিছু নয়।

পার্বত্য জেলার তিন সাংসদকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের সময় তিন পার্বত্য জেলার তিন সাংসদ প্রতারণামূলক ভূমিকা পালন করেছেন। তারা ব্যক্তি স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের যুপকাষ্টে পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তর স্বার্থকে নির্লজ্জভাবে এবং অকম্পিত হস্তে বলি দিয়েছেন। কাজেই এই জনমত বিরোধী, জনস্বার্থ বিরোধী ভূমিকার জন্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যপদে বহাল থাকার নৈতিক অধিকার তারা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছেন। বক্তারা আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে জনতার কাতারে এসে সামিল হওয়ার জন্য তিন এমপির প্রতি আহ্বান জানান।

 

 

 

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More