খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী খাগড়াছড়িতে পালিত হয়েছে। আজ ২০ মে রবিবার সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর মাঠে বেলুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্বোধন করেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য মি. সচিব চাকমা। এ সময় এক ঝাঁক শিশু বেলুন উড়িয়ে দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে বর্নিল করে তোলেন। এরপর দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমেন চাকমা ও সচিব চাকমা দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
উদ্বোধন শেষে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমেন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর কেন্দ্রীয় সদস্য মি. সচিব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ান। সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সভাপতি আপ্রুসি মারমা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা সমাবেশ পরিচালনা করেন। সমাবেশে খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলা, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী ও সংগঠনের নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশ শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্রী অর্কিডা চাকমা। শোক প্রস্তাব শেষে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সমাবেশে সচিব চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের একটি নিপীড়ন-নির্যাতন ও অত্যাচারিত অঞ্চল। এখানে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। ভূমি বেখলের মাধ্যমে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সকল নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতিবাদ ও দাবি-দাওয়াকে উপেক্ষা করে সেমুতাঙের গ্যাস চট্টগ্রামে পাচার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে বাঙালি বানিয়েছে। শেখ মুজিবের বাঙালি বানানোর ঘোষণাকে তার কন্যা শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন এমপিও জনগণের সাথে বেঈমানী করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না এবং মেনে নেবে না। সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল জনগণকে ইউপিডিএফ-এর আদর্শকে বুকে ধারণ করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া আমাদেরকে অধিকার দেবে না। আমাদের অধিকার আমাদেরকে আদায় করে নিতে হবে। আন্দোলন সংগ্রাম ছাড়া অধিকার পাওয়া যায় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায় না হলে ভবিষ্যতে পাহাড়িদের অস্তিত্ব রক্ষা করা যাবে না।
তিনি বলেন, সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদার না করে ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে সরকারী নীল নক্সা বাস্তবায়ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি জনগণের কাতারে এসে আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য সন্তু লারমার প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলামকে অপসারণের দাবি জানিয়ে বলেন, এই ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের দাবি-দাওয়াকে অগ্রাহ্য করে নিজ ক্ষমতাবলে ভূমি সমস্যা সমাধান করতে চাচ্ছেন। যা সমাধানের পরিবর্তে জটিলতা তৈরি করছে। তিনি অবিলম্বে ভূমি কমিশনের বিতর্কিত কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সমাজ–সংস্কৃতি ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
নতুন কুমার চাকমা বলেন, ছাত্রদেরকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করতে হবে। আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার বিতর্কিত ভূমি কমিশনকে দিয়ে এক তরফাভাবে আবারো আগামী ২৩-২৪ মে শুনানীরর তারিখ ধার্য্য করেছে। ভূমি কমিশনের এই অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ জনগণ কিছুতেই মেনে নেবে না। তিনি ভূমি কমিশনের বিতর্কিত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
অংগ্য মারমা তার বক্তব্যে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহের উপর সরকার বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। এটা পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ মেনে নেয় নি, এবং মেনে নেবে না। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আপোষহীন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যে কোন অন্যায়-অত্যাচার রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি পিসিপি‘র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানান।
রীনা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে তার থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্র আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। সরকার একদিকে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে পাহাড়িদের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে ভুমি কমিশনের মাধ্যমে পাহাড়িদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু প্রশাসন দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। দোষীরা জামিনে মুক্ত হয়ে আবার খুন ধর্ষণে মেতে উঠছে। লংগদুতে সুজাতা চাকমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। তিনি সুজাতা চাকমাকে ধর্ষণের পর হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ছাত্র আন্দোলন জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
সমাবেশ শেষে স্বনির্ভর মাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্যর্ যালী শুরু হয়। র্যালীটি চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার স্বনির্ভর মাঠে গিয়ে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ৪ঠা মে লংগদু গণহত্যার প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে ২০শে মে ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠিত হয়।