খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ শান্তিপূর্ণভাবে পালিত
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি জেলায় আজ ১৭ ডিসেম্বর বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এঅবরোধ কর্মসূচি চলে। জেলা সদর সহ পানছড়ি, মহালছড়ি, দিঘীনালা, মানিকছড়ি, গুইমারাসহ সকল উপজেলায় জনগণ স্বতঃস্ফুর্তভাবে সড়ক অবরোধ পালনে সহযোগিতা প্রদানকরেছেন। গত ১৫ ডিসেম্বর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ১১তম কাউন্সিল উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত র্যালীতে পুলিশী হামলা, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ, গুলিবর্ষণ ও বেপরোয়া ধর-পাকড়, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এই সড়ক অবরোধের ডাক দেয়।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা এক বিবৃতিতেশান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ পালনে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য জেলার সকলগাড়ি মালিক সমিতি সহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিবৃতিতেঅংগ্য মারমা বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর পুলিশ বিনা উস্কানিতে পাহাড়ি ছাত্রপরিষদের র্যালীতে হামলা চালায়। এ সময় র্যালীতে অংশগ্রহণকারীদের লক্ষ্য করেপুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ এবং গুলিবর্ষণ করে। পুলিশ ওসেনাবাহিনী স্বনির্ভর এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ব্যাপকধরপাকড় করে। এতে নারী ও শিশুদের উপর নির্যাতন সহ ৪০ জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।এরপর অধিকাংশকে ছেড়ে দেয়া হলেও ১০ জনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতেপাঠিয়ে রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
বিবৃতিতেতিনি অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়কঅবরোধকে বানচাল করে দেয়ার লক্ষে স্বনির্ভর, খবংপুজ্যা, নারানহিয়া সহবিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনী টহলের নামে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা চালায়।এভাবে সেনা কর্তৃত্বকে জাহির করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামেগণতান্ত্রিক অধিকারের উপর সেনা হস্তক্ষেপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিবৃতিতেতিনি উল্লেখ করেন এবং টহলের নামে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকারজন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক আন্দোলনেবাধা সৃষ্টি করার লক্ষে পরিকল্পিতভাবে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুবফোরাম, ইউপিডিএফ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ১৪ জন নেতা কর্মী সহ অজ্ঞাত৪৫০/৫০০ জন কর্মী, সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি অবিলম্বে এধরনের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বন্ধ করে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মানপ্রদর্শনের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় পাহাড়ি ছাত্রপরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ ও জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তরকর্মসূচি ঘোষণা দিতে বাধ্য হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সভা-সমাবেশ, মিটিঙ-মিছিল করার অধিকার একটিসংবিধান স্বীকৃত গণতান্ত্রিক অধিকার। খাগড়াছড়িতে প্রশাসন বিনা কারণেগণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি রেখে কার্যত স্বৈরাচারী নীতিবাস্তবায়ন করছে।
বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে সভা-সমাবেশ ও মিটিঙ-মিছিলেরউপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া, ১৫ ডিসেম্বর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলাপ্রত্যাহারপূর্বক আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং রিমান্ডের নামে নির্যাতনবন্ধ করা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের র্যালীতে এবং সাধারণ জনগণ, নারী ও শিশুদেরউপর হামলার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবংপক্ষপাতদুষ্টতার কারণে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো: আনিস-উল হক ভূঁইয়াকেপ্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।
এছাড়া তিনি গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে আটককৃত শ্রমিক নেতা মোশরেফা মিশুরও অবিলম্বে নিঃশর্ত দাবি করেছেন।