খাগড়াছড়িতে সদ্য কারামুক্ত পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাকে সংবর্ধনা
খাগড়াছড়ি : ‘HISTORY WILL ABSOLVE US’ ‘ইতিহাস থাকবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে’ এই শ্লোগানে সদ্য কারামুক্ত বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমাকে সংবর্ধনা দিয়েছে পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
আজ শনিবার (১৪ই জানুয়ারি ২০১৭) সকাল সাড়ে ১১টায় খাগড়াছড়ি সদরের খবংপুড়িয়ায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি সোনায়ন চাকমার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ এর অন্যতম সংগঠক মিঠুন চাকমা, সদ্য কারামুক্ত পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা ও অর্থ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা। অনুষ্ঠানে মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক পলাশ চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমা। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শুরুতে এযাবৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকারহারা মানুষের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরাবতা পালন করা হয়।
নিরবতা পালনের পর পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখা, পিসিপি’র খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখা, পিসিপি’র খাগড়াছড়ি মহিলা কলেজ শাখার নেতৃবৃন্দ ফুল দিয়ে বিপুল চাকমাকে সংবর্ধনা জানান।
এরপর পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা পিসিপি ও ইউপিডিএফ’র পতাকা ছুঁয়ে অধিকারহারা, শোষিত-বঞ্চিত মানুষের হয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাবেন বলে শপথ গ্রহণ করেন।
সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় রতন স্মৃতি চাকমা বলেন, আপনারা যারা এখানে উপস্থিত হয়েছেন সবাই নতুন প্রজন্ম। আর নতুন প্রজন্ম কোন অন্যায় চোখ বুজে সহ্য করতে পারেনা। তাই, সরকারের সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপনাদের সোচ্চার হতে হবে।
মিঠুন চাকমা বলেন, ৮৯-এ পিসিপি গঠনের পর থেকে এদেশের শাসকগোষ্ঠী পিসিপি’র নেতা কর্মীদের উপর নানা ধরনের অমানুষিক নির্যাতন, ধরপাকড়, হামলা-মামলা চালিয়ে আসছে। তারপরও পিসিপি তার আদর্শিক ধারা ধরে রেখে শাসক গোষ্ঠীর রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
বিপুল চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠন কখনো সহজ ছিলনা। সেই সময় স্বৈরাচারি শাসকের শাসন ছিল এই দেশে। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত পিসিপি’র বহু নেতা ত্যাগ স্বীকার করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আমিও পিসিপি’র সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারা বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের হয়ে কাজ করে যেতে চাই।
তিনি আরো বলেন, আজ এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার মায়ের কথা না বললে নয়। আমার সাংগঠনিক কাজে মা আমাকে বহু উৎসাহ দিয়েছেন। একবার মা আমাকে ফোন করে বলছিল বাবা আমি খুব অসুস্থ, পারলে বাড়িতে এসো। সেই সময় আমি কুমিল্লা ভেক্টোরিয়া কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচার চেয়ে কুমিল্লাতে মিছিলে ছিলাম। ফলে সেদিন অসুস্থ মায়ের সাথে দেখা করতে পারিনি। সর্বশেষ আমাকে যেদিন গ্রেপ্তার করা হয় সেদিন আমার অসুস্থ মা আমার সামনে রক্ত বমি করছিলো, আমি বার বার ওসি জব্বারকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম আমার মায়ের সামনে যেন আমাকে গালিগালাজ করা না হয়। কিন্তু বর্বর ওসি জব্বার আমার কথা তোয়ক্কা না করে আমার মায়ের সামনে অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করে আমাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। পরে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে আমার মায়ের মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, আমার এক মা হারিয়ে গেছে, কিন্তু এখন আমার হাজার হাজার মা হয়েছে, সবাই আমাকে নিজের ছেলের মত ¯েœহ করছে। অধিকারহারা নিপীড়িত মানুষের জন্য যদি আমার জীবনও দিতে হয় দেবো, শত কারা বরণ করতে হয় করবো।
উল্লেখ্য, গত ২৩ অক্টোবর ২০১৬ অসুস্থ মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পথে পানছড়ি থানার সামনে থেকে পুলিশ বিপুল চাকমাকে অমানবিকভাবে আটক করে। এরপর মিথ্যা ও সাজানো মামলায় দীর্ঘ ৭৯ দিন কারাভোগের পর গত ১০ জানুয়ারি ২০১৭ তিনি খাগড়াছড়ি জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।