খাগড়াছড়িতে সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞায় তিন সংগঠনের নিন্দা ও প্রতিবাদ

0

খাগড়াছড়ি : গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর সভাপতি নিরূপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা আজ ১০জুন ২০১৭ শনিবার সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক যুক্ত বিবৃতিতে ৩০ জুন পর্যন্ত খাগড়াছড়িতে সভা সমাবেশের উপর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা জারির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

bibritiবিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ এই নিষেধাজ্ঞাকে সভা সমাবেশ করার সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি চরম লংঘন হিসেবে অভিহিত করেন। একইসাথে নেতৃবৃন্দ বলেন, খাগড়াছড়ি জেলায় বেশ কয়েকদিন ধরে উগ্র ও চরম সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী উস্কানীমূলক কার্যকলাপ করে যাচ্ছে। চিহ্নিত উক্ত সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক পক্ষ বিশেষ বাহিনীর ছত্রছায়ায় সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে খাগড়াছড়িতে উত্তেজনাকর ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছিল এবং এখনো করে যাচ্ছে। উক্ত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে এবং একইসাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন অপারেশান উত্তরণ প্রত্যাহার করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীর অত্যচার নিপীড়ন ও সাম্প্রদায়িক উস্কানী বন্ধ না করে সভা সমাবেশের অধিকার কেড়ে নেয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠীকেই আশাকারা দেয়া হচ্ছে বলে নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে অভিযোগ করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, নিপীড়িত পার্বত্য জনগণের একমাত্র সাংবিধানিক অবলম্বন প্রতিবাদ মিছিল মিটিং সভা সমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নিয়ে প্রশাসন উক্ত সাম্প্রদায়িকগোষ্ঠীকেই প্রশ্রয় দিচ্ছে।

উল্লেখ্য, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবহিত হয়েছে যে, গত ৮ জুন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে খাগড়াছড়ি জেলার আইন শৃঙ্খলা মিটিং থেকে গত ২ জুন লংগদু উপজেলায় পাহাড়ি গ্রামে হামলা, লুটপাট, হত্যা ও অগ্নিসংযোগ এবং কল্পনা চাকমা অপহরেণের বিচার নিয়ে তালবাহানা বন্ধের দাবিতে আঞ্চলিক সংগঠনসমূহের পল্টাপাল্টি কর্মসূচীর প্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করা সাংবিধান স্বীকৃত নাগরিক অধিকার। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জেলা প্রশাসকের ডাকা আইন-শৃঙ্খলা মিটিং থেকে এই ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন।

নেতৃবৃন্দ গত ৭ জুন খাগড়াছড়ির স্বনির্ভরে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের মিছিলে বিজিবি ও পুলিশের হামলা, নারীদের প্রকাশ্য শ্লীলতাহানি এবং ২১ জনকে আটকের ঘটনা বিষয়ে বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার নিয়ে প্রহসন বন্ধের দাবিতে আয়োজিত উক্ত মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিছিলের গতিরোধ করলে সেখান থেকে ঘুরে আসার প্রস্তুতি নেয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু সে সুযোগ না দিয়ে প্রথমে বিজিবি ও পরে পুলিশ সদস্যরা মিছিলের উপর হামলা চালায় ও নারীদেরকে প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি ও  লাঠিপেটা করে। এতে সংগঠনটির বহু নেতা কর্মী আহত হয় এবং ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

নেতৃবৃন্দ উক্ত ঘটনাটিকে পরিকল্পিত আখ্যায়িত করে বলেন, মূলত প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটিয়ে সংগঠনের ওপর তার দায় চাপানোর অপকৌশল হিসেবে খাগড়াছড়িতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা মিটিং-এ পাহাড়িদের প্রতিনিধিত্বকারী কোন সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ করেন। প্রশাসন কর্তৃক খাগড়াছড়ি জেলাবাসীকে এ ধরণের অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ায় নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ ও নিন্দা জানান।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, লংগদু উপজেলায় পাহাড়ি গ্রামে হামলা, লুটপাট, হত্যা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী ঘোষণার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়িতে পাল্টাপাল্টি সভা সমাবেশ ডাকা হয়নি। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ করার স্বপেক্ষে প্রশাসন কোন সুনির্দিষ্ট কারণ করতে পারেনি বলেও নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে অভিযোগ করেন।

নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে খাগড়াছড়ি থেকে সভা সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি জানান।
—————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More