অপহৃত দুই নেত্রীকে উদ্ধারসহ বিভিন্ন দাবিতে

খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি জেলায় দিনব্যাপী সড়ক ও নৌপথ অবরোধ সফলভাবে পালিত

0

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি : রাঙামাটির কুদুকছড়ি আবাসিক এলাকা থেকে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও জেলা সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকে উদ্ধারসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ বুধবার (২১ মার্চ ২০১৮) খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম(ডিওয়াইএফ) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ)-এর ডাকা দিনব্যাপী সড়ক ও নৌপথ অবরোধ সফলভাবে পালিত হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও রাঙামাটিতে স্বতঃস্ফুর্ত ও শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

# শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম রোড দখল করে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ পালন করছে তিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা

অবরোধের সমর্থনে সকাল থেকে পিকেটাররা দুই জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় এবং টায়ার জ্বালিয়ে  ও গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করে। পিকেটাররা খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের ফায়ার সার্ভিস এলাকা এবং স্বনির্ভরে খাগাড়ছড়ি-পানছড়ি সড়কে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে।

অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলা শহর ও উপজেলাগুলো থেকে দূরপাল্লার সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ ছিল। রাঙামাটিতে নৌপথেও দূরপাল্লার কোন নৌযান ছেড়ে যায়নি। জেলা শহর ও উপজেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ সড়কেও যান চলাচল করেনি।

অবরোধ চলাকালে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে খাগড়াছড়ির পানছড়ি কলেজ গেইট এলাকায় পিকেটাররা রাস্তায় টায়ার জ্বালানোর সময় পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে পিকেটারদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ পিকেটারদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এতে দুই পিকেটার আহত হয়।

এছাড়া সকাল ৯টার দিকে জেলার গুইমারায় পিকেটাররা পিকেটিং করার সময় পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পিকেটারদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে একজন পিকেটার আহত হয়। এছাড়াও দুই জেলায় বিভিন্ন স্থানে পিকেটাররা অবস্থান করে অবরোধ কর্মসূচী পালন করেন।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরের দক্ষিণ খবংপুজ্জে এলাকায় খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে রাস্তায় টায়ার জ্বালাতে গেলে পুলিশ-আনসারের একটি যৌথ দল পিকেটারদের ধাওয়া করার চেষ্টা করে। পরে সেনাবাহিনীর একটি দলও এতে যোগ দেয়। এরপর বিকালের দিকে পিকেটাররা আবারো রাস্তায় নামতে চাইলে সেনাবাহিনী-পুলিশ-আনসার মিলে তাদের ধাওয়া করলে পিকেটাররা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এ সময় পিকেটারদের সাথে স্থানৗয় নারী-পুরুষও প্রতিরোধে যোগ দেয়। পরে সেনা-পুলিশের দল পিছু হটতে বাধ্য হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষিত সন্ত্রাস বন্ধ, কুখ্যাত সন্ত্রাসী-দাগি খুনী-বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা ও তার সহযোগিদের গ্রেফতার এবং সেনা-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহৃত এইচডব্লিউএফ-এর দুই নেত্রী মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে উদ্ধারের দাবিতে তিন সংগঠন এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা এক বিবৃতিতে দিনব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সহযোগিতা প্রদানের জন্য রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার সকল যানবাহন মালিক-চালক সমিতি, শ্রমিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অপহরণের চার দিনেও অপহৃত দুই নেত্রীকে উদ্ধারে পুলিশের কোন পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। ফলে দুই নেত্রীর জীবন নিয়ে শঙ্কা বেড়েই চলেছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে দুই নেত্রীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারপূর্বক অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত রবিবার (১৮ মার্চ ২০১৮) রাঙামাটির কুদুকছড়ি ইউনিয়নের আবাসিক এলাকায় সেনাসৃষ্ট সন্ত্রাসীরা তিন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও জেলা সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এছাড়া সন্ত্রাসীরা সেখানে একটি ছাত্র মেসে অগ্নিসংযোগ ও যুব ফোরাম নেতা ধর্মশিং চাকমাকে গুলি করে জখম করে।
————–
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More