গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের একযুগ পূর্তিতে ঢাকায় র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
DYF4ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রামের অগ্রগামী যুব সমাজের সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের একযুগ পূর্তিতে ঢাকায় র‌্যালী ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সম্মুখে রঙিন বেলুন উড়িয়ে ও উই শ্যাল ওভারকাম সঙ্গীত গেয়ে বিপুল আবেগ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আজ ৪ এপ্রিল শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের একযুগ পূর্তির অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়।

‘সমাজ-জাতি রক্ষার্থে জাগ্রত হও যুব সমাজ, জাতি ধ্বংসের সর্বনাশা চক্রান্তে যুবশক্তিকে মাস্তানি-গুণ্ডামিতে ভাড়া খাটানো রুখে দাও’– এই আহ্বান সম্বলিত বিশাল ব্যানার সজ্জিত মঞ্চে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফ্যাসীবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর আকমল হোসেন, গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমা। পিক-আপ ভ্যানে বিশেষভাবে নির্মিত মঞ্চের পাশে ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা, ইউপিডিএফ’এর অংগ্য মারমা, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি সামিউল আলম রিচি, পিসিপি’র সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সহ:সভানেত্রী নিরূপা চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রীনা দেওয়ানসহ আমন্ত্রিত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানের সাথে সংহতি জানাতে আমন্ত্রিত অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।DYF1

একযুগ পূর্তির সমাবেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও তিন পার্বত্য জেলা থেকে তিন শতাধিক যুবক যুবতি সমবেত হয়েছে। ক’দিন ধরে অসহনীয় গরমের পর রাতে এবং আজ সকালে বৃষ্টির পর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ছিল বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সমাবেশে প্রফেসর আকমল হোসেন বলেন, একটি সংগঠনের জন্য ১২ বছর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেশে বিভিন্ন নামে আরও অনেক যুব সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে। সেগুলো ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ করতে চায়। যুব ফোরাম এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম। আপনারা দীর্ঘকাল নিপীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়ি যুব সমাজকে সংগঠিত করেছেন, বড় মূল্যবোধে যুব শক্তিকে চালিত করেছেন। রাণাপ্লাজার রাণা তো সরকারি দলের সাথে যুক্ত, ব্যক্তিজীবনে নেশাগ্রস্ত ফেনসিডিল আসক্ত। তারা যুব সমাজের শক্তি নয়।

প্রফেসর হোসেন আরও বলেন, তথাকথিত শান্তি চুক্তিতে পাহাড়ে শান্তি আসে নি, নিপীড়ন কমে নি। বরং কিছু লোক সুবিধা পেয়েছে মাত্র। ২০১০ সালে সাজেকে সেটলার হামলা তদন্তে এলাকায় গিয়ে তিনি সেনা ক্যাপ্টেনের জেরার মুখে পড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতারও বর্ণনা দেন।

জাতীয় গণফ্রন্টের নেতা টিপু বিশ্বাস আবেগদীপ্ত কণ্ঠে সমবেত তরুণদের সংগ্রামী অভিবাদন জানিয়ে বলেন, পাহাড়ের যুব সমাজ উঠে দাঁড়িয়েছে, পাহাড়-সমতলে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে। লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার, খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা করতে হবে। তিনি বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের তীব্র সমালোচনা করে তা বাতিলে দাবি জানান। দেশের সংবিধানে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহের স্বীকৃতি না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন দেশে বাঙালিদের স্বীকৃতিও নামমাত্র। ধনীক শ্রেণীই সবকিছু লুটেপুটে খাচ্ছে। দেশ স্বাধীন হলেও সাধারণ মানুষের মুক্তি আসে নি। প্রকৃত মুক্তির জন্য সংগ্রাম করার আহ্বান জানান।

10156155_653993084673062_312871408_nজাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম তার বক্তব্যে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম’কে সারা দেশের সংখ্যালঘু জাতি ও জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে আন্দোলন গড়ে তোলার দায়িত্ব কাঁধে নিতে আহ্বান জানান। দেশের সংবিধানে অন্যান্য জাতিসত্তার স্বীকৃতি না থাকায় তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে ফয়জুল হাকিম লালা আরও বলেন, ইতিহাসের গতিপথে শোষণ টিকে থাকতে পারে না। পূর্ব পাকিস্তানে জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম হয়েছে। সংগ্রামের শীর্ষে ’৭০ সালে পাকিস্তান সরকার নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দেয় নি। শেখ মুজিব ৭ মার্চ স্বাধীনতার কথা বলে পাকিস্তানীদের নিকট আত্মসমর্পণ করেছিলেন। আলোচনার টেবিলে স্বাধীনতা আসে না। ২৫ মার্চ পাকিস্তানীদের হত্যা পরিকল্পনা জেনেও মুজিব জনগণকে পূর্ব প্রস্তুতির নির্দেশ দেন নি, সে প্রশ্ন করার অধিকার আছে জনগণের। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন সিরাজ শিকদার, টিপু বিশ্বাস সহ অনেকে। ’৭১-এর প্রকৃত ইতিহাস জানতে দিতে হবে বলে তিনি দাবি করেন।

সমাবেশে পিসিপি’র সভাপতি থুইক্যচিং মারমা পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক কালের নিপীড়ন নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন এবং পিসিপি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরে এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সমাবেশ শেষে বর্ণাঢ্য র‌্যালি টিএস, প্রেস ক্লাব, পল্টন প্রদক্ষিণ করে। এ সময় উৎসুক পথচারীদের নিকট একযুগ পূর্তির লিফলেট বিলি করা হয়।  র‌্যালিটি প্রেস ক্লাবে এসে এক সংক্ষিপ্ত সভার রূপ নেয়। এ সময় সমবেতদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আগামী দিনের লড়াই সংগ্রামে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি নতুন কুমার চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা। আগামীকাল শনিবার দিন ব্যাপী সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More