গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের এক দশকপূর্তি পালিত
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামের যুব সমাজের অগ্রণী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম প্রতিষ্ঠার এক দশকপূর্তি খাগড়াছড়িতে পালিত হয়েছে। আজ ৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুর ১.৩০টায় জেলা সদরের স্বনির্ভর মাঠে প্রতিষ্ঠার এক দশকপূর্তি অনুষ্ঠান বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সান্তাল কাউন্সিলের আহ্বায়ক ও জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এস.সি আলবার্ট সরেন। উদ্বোধনের পর গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক (ইউপিডিএফ) এর কেন্দ্রীয় সদস্য মি. সচিব চাকমা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের সদস্য সচিব আমীর আব্বাস, ইন্ডিজেনাস মুনিপুরী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট (সিলট) এর সাধারণ সম্পাদক ভীমপল সিনহা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমেন চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেমিন চাকমা এবং সভা পরিচালনা করেন যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা।
সমাবেশ শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন রেমিন চাকমা। শোক প্রস্তাবের পর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সমাবেশে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম থেকে ৮ শতাধিক যুবক-যুবতী ও সংগঠনের নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আলবার্ট সরেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকা এখন সেটলারদের দখলে। মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গা এলাকা প্রায় বেদখল করে নিয়েছে। বান্দরবানেও পাহাড়িদের হাজার হাজার একর জমি বিভিন্ন কোম্পানীর নামে লিজ দেয়া হচ্ছে। পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের মতোকাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ভূমি কমিশনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কমিশনের বর্তমান বিতর্কিত কার্যক্রমের ফলে এ এলাকার ভূমির জটিলতা আরো বাড়বে।
তিনি ভাষা সংস্কৃতির অধিকার রক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
সচিব চাকমা বলেন, বিতর্কিত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী আইন পাসের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যলঘু জাতিসমুহের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। দেশের সর্বত্র ব্যাপক জনগণের তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে ক্ষমতাসীন সরকার স্বৈরাচারি কায়দায় বাঙালি জাতীয়তা বহাল রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির জনগণ কখনই সরকারের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নেবে না।
সভাপতির বক্তব্যে নতুন কুমার চাকমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি‘ পূর্ণবাস্তবায়ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা সংখ্যালঘু জাতির জনগণের সাথে প্রতারণা করছে তা নয়, দেশের বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করে চলেছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা‘, ‘দিন বদলের‘ হরেক রকমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে না হতে ফ্যাসিবাদী নখদন্ত বের করে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বতর্মান ক্ষমতাসীন সরকার। ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহের পরিচয় কেড়ে নিয়ে ক্ষান্ত থাকে নি, দেশের বৃহত্তর জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারও ছিনিয়ে নিয়েছে, চড়াও হয়েছে বিরোধী দলের ওপরও। নানা বিধি-নিষেধ কালাকানুন আরোপ করে সরকার মিটিঙ-মিছিলের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য তিনি যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী আইন বাতিল, বিতর্কিত ভূমি কমিশনের কার্যক্রম বন্ধ করা,অঘোষিত সেনাশাসন তুলে নেয়া ও প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতির দাবী জানান
সমাবেশ শেষে স্বনির্ভর মাঠ থেকে একটি র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি উপজেলা পরিষদ হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার ঘুরে আবার স্বনির্ভর মাঠে গিয়ে শেষ হয়।