চিম্বুক পাহাড়ে পাঁচতারকা হোটেল প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ৬২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি
ঢাকা ।। বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের জমিতে সিকদার গ্রুপের পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণ প্রকল্প বাতিল এবং এ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সব ধরনের সম্পৃক্ততা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৬২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
এছাড়াও আন্দোলনরত জনগোষ্ঠীকে সেনাবাহিনীর নামে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও নানা হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে তা অবিলম্বে খতিয়ে দেখে তা বন্ধ করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও অভিযোগ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জরুরি বলে জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।
আজ সোমবার (১৬ নভেম্বর ২০২০) বিবৃতিদাতাদের পক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সই করা এক বিবৃতিতে এসব আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, নিজেরা করি এর সমন্বয়কারী খুশি কবির, অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডি সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গীতিআরা নাসরীন, আসিফ নজরুল প্রমুখ।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকগণ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার চিম্বুক-থানচি সড়কে ম্রো অধ্যুষিত কাপ্রু পাড়া, দলা পাড়া ও শোং নাম হুং এ বিতর্কিত সিকদার গ্রুপের অঙ্গ সংগঠন আর এন্ড আর হোল্ডিং লিমিটেডের সাথে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ম্যারিয়ট হোটেলস অ্যান্ড রিসোর্টস নামে একটি পাঁচতারা স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে প্রস্তাবিত স্থাপনার প্রয়োজনে পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে এবং ম্রো জাতিগোষ্ঠীর শ্মশান, পানির উৎসসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশের সংবিধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন, পাবর্ত্য জেলা পরিষদ আইন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন লঙ্ঘন করে ম্রো জাতির স্বাধীন ও পূর্ব সম্মতি ছাড়া তাদের মতামত বিবেচনায় না নিয়ে একটি বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জোর করে এমন বিলাসী স্থাপনা নির্মাণকে ম্রো সম্প্রদায়ের ১০ হাজার নাগরিক তাদের ভিটেমাটি, ফসলি জমির ওপর আগ্রাসন হিসেবে দেখছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, প্রচলিত আইন অনুযায়ী এটি বেআইনি হবে। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর সম্মতি ও সংশ্লিষ্ট মৌজা হেডম্যানের সুপারিশ ছাড়া ভূমির মালিকানা হস্তান্তরে সম্মতি দিতে পারে না। যদি তা হয়ে থাকে, তাতে প্রিন্সিপল অব ন্যাচারাল জাস্টিস লংঘন হয়েছে। স্বার্থবিরোধী এমন স্থাপনা নির্মাণ বাংলাদেশের সংবিধানেরও পরিপন্থী কেননা সংবিধানে জনগণের জীবনের, সম্পত্তির এবং পেশার অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট নাগরিকগণ বলেন, আন্দোলনরত ম্রো জাতির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের আন্দোলন ও প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে যা সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকে ম্লান করবে বলে আমরা মনে করি।
বিবৃতিতে তারা ম্রো জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা, প্রাকৃতিক সম্পদে অভিগম্যতা, ঐহিত্য, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘শুধুমাত্র গোষ্ঠী ও ব্যবসায়ীক স্বার্থে, জনস্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ উপেক্ষা করে বান্দরবানের মতো সংবেদনশীল পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থায় পরিচালিত পর্যটনসহ অন্যান্য সব অননুমোদিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অবিলম্বে স্থগিত করা এবং এমন সব কর্মকাণ্ডের জন্য দখলকৃত ভূমি থেকে দখলদারদের উচ্ছেদের দাবি জানাচ্ছি।’
এছাড়াও তারা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের অব্যাহত ভূমি আগ্রাসন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা দিতে অবিলম্বে ভূমি কমিশন কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।