ঢাকা : বৃহত্তর পার্বত্য চটগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)’র ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ২০ মে ২০১৭, শনিবার বিকাল ৩টায় ঢাকায় রিপোর্টাস ইউনিনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে ‘পিসিপি গঠন ও ছাত্র আন্দোলন এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভার শুরুতে সম্প্রতি শহীদ পিসিপি নেতা রমেল চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকৃত সকল শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
‘পিসিপি প্রতিষ্ঠার চেতনা সমুন্নত রেখে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন বেগবান করুন’ এই স্লোগানে পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, পিসিপি’র সাবেক সভাপতি মিল্টন চাকমা, অংগ্য মারমা ও থুইক্য চিং মারমা। সঞ্চালনা করেন পিসিপি’র সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা।
সভায় আলোচকরা বলেন, লংগদু গণহত্যাকে কেন্দ্র পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এর অনেক পূর্বেই পার্বত্য চট্টগ্রামে পিসিপি গঠনের পটভূমি রচিত হয়েছিল। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত বিদ্বেষ নীতি ও নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে পিসিপি গঠিত হয়েছিল । ১৯৮৯ সালে ৪মে লংগদু গণহত্যা ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করেছিল যার যৌক্তিক পরিণতি হয়েছিল ২০মে ঢাকায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
আলোচকগণ আরো বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ শুরু থেকে নিপীড়নের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল আন্দোলনের দৃষ্টান্ত রয়েছে পিসিপি’র। শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় দমনপীড়নের ধারাবাহিক প্রতিরোধের পাশাপাশি ৯২ সালে লোগাং লংমার্চ, ৯৪ সালে ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনসহ বহু গৌরবজ্জ্বল প্রতিবাদও সংগঠিত করেছিল পিসিপি। বস্তুত, ’৯০ দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনের মূল ভূমিকায় ছিল পিসিপি। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিসত্ত্বাসমূহের অস্তিস্থ রক্ষার আন্দোলনে পিসিপি অন্যতম ভূমিকা পালন করছে। এ কারণে একের পর এক পিসিপি নেতাকর্মীদের আটক-গ্রেফতার-নির্যাতনসহ হত্যাও করছে সেনাপ্রশাসন। দমনপীড়নের ধারাবহিকতায় নান্যাচরে সেনারা পিসিপি নেতা রমেল চাকমাকে হত্যা করেছে। বর্বর দমনপীড়ন চালালেও পিসিপি’র আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না বলে বক্তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাবেক পিসিপি সভাপতি মিল্টন চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠনের পূর্বে ‘রাডার’সহ বিভিন্ন প্রকাশনা বের হয়েছিল। এই প্রকাশনাসমুহ ছাত্র সমাজকে নাড়া দিয়েছিল যা পিসিপি গঠন ও দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ’৯১ সাল, যখন প্রসিত বিকাশ খীসা সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে পিসিপি’র নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই থেকে পিসিপি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। এর পর থেকে আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। তিনি বলেন, যে কোন আন্দোলনের ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজ ও সংগঠনের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তোরের গণ অভ্যুত্থানসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলনের ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজের ব্যাপক ভূমিকা ছিল।বর্তমান ছাত্র সমাজ ও পিসিপিকেও পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
সাবেক পিসিপি’র অন্যতম সভাপতি অংগ্য মারমা বলেন, পিসিপি’তে সংগ্রামী ধারার পাশাপাশি আপোষকামীরাও ছিল। এরা সংগঠনের নাম “উপজাতীয় ছাত্র পরিষদ” রাখতে চেয়ে ছিল। পরবর্তীতে মতানৈক্যের কারনে মূলধারা পিসিপি থেকে এরা অপসারিত হয়। তিনি মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার আন্দোলনের সফলতা জানিয়ে বলেন, সন্তোষজনক না হলেও পিসিপি’র আান্দোলনের ফলে সরকার কয়েকটি জাতিসত্তার মাতৃভাষায় রচিত পাঠ্যপুস্তক প্রনয়ণ করতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্র সমাজকে সবচেয়ে ভূমিকা নিতে হবে।
পিসিপি’র অন্য আরেক সাবেক সভাপতি থুইক্যচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহতভাবে ভূমিবেদখল চলছে। সম্প্রতি বান্দরবানে ৪ হাজার একরেরও অধিক ভূমি বেদখল করে রাখা হয়েছে। এই ভূমিদস্যুদের ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে দূর্ভেদ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
শেষে বর্তমান পিসিপি সভাপতি বিনয়ন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকশ্রেণীর দমনপীড়ন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই উল্লেখ করে সর্বস্তরের ছাত্র সমাজকে পিসিপি’র পতাকাতলে সমবেত হয়ে লড়াই-সংগ্রামকে আরো বেগবান করার আহব্বান জানান।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।