থানচিতে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পাড়াগুলোকে অবৈধ বলছে প্রশাসন!

0
সংগৃহিত

বান্দরবান ।। বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকায় স্থাপিত কয়েকটি চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পাড়াকে অবৈধ আখ্যায়িত করে নতুন পাড়া স্থাপন বন্ধ করার জন্য স্থানীয় হেডম্যান ও কার্বারীদের চিঠি দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

গত ২১ অক্টোবর থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: আরিফুল হক মৃদুল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি (স্মারক নং-০৫.৪২.০৩৯৫.০০০.০৬.০০২.২০-৯৯৬, তারিখ-২১/১০/২০২০ খ্রি.) স্থানীয় পাড়ার কার্বারী ও সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যানদের কাছে প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে- ৩৮ বিজিবি ব্যাটালিয়ন বলিপাড়া জোনের স্মারক নং-৪৪.০২.৪৬৩০.১৩৮.০১.১৭৭৫.২০/১৮৫. তারিখ-১২/১০/২০২০ খ্রি.।

যেসব পাড়ার কার্বারীদের চিঠিটি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে সেগুলো হলো- অনিল চেয়ারম্যান পাড়া, বলপেয়্যে পাড়া, কমলা বাগানপাড়া, প্রফুল্ল পাড়া, জ্ঞানলাল পাড়া, ব্রহ্মদত্ত পাড়া।

চিঠিতে বলা হয়, ‘উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত পত্রের আলোকে জানানো যাচ্ছে যে, থানচি উপজেলাধীন দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় অবৈধভাবে নতুন করে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া স্থাপন করা হচ্ছে এবং অবৈধভাবে স্থাপিত নতুন পাড়াসমূহে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ও অবস্থান করে বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে মর্মে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়। এমতাবস্থায় নতুন করে অবৈধভাবে পাড়া স্থাপন বন্ধ করাসহ ইতিপূর্বে স্থাপিত চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা পাড়াসমূহে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ও অবস্থান এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ পূর্বক নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

প্রশাসনের এমন তৎপরতাকে গভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন পাহাড়িরা। এই চিঠির মাধ্যমে প্রশাসন পাহাড়িদের নিজ জায়গা-জমি, বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা ‍চালাচ্ছে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, দুর্গম এলাকার এসব পাড়ায় পাহাড়িরা দীর্ঘ বছর ধরে, এমনকি কেউ কেউ যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। তারা জীবিকার প্রয়োজনে জুমচাষ ও বাগান-বাগিচা করে থাকেন এবং জুমের সাথে জুমঘর স্থাপন করে থাকেন। কাজেই এখানে নতুন বা অবৈধ পাড়া বলে কিছুই নেই। কি কারণে প্রশাসন এমন চিঠি দিয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

তারা অভিযোগ করে আরো বলেছেন, সম্প্রতি ঐ এলাকায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি’র হয়রানিমূলক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা এলাকার হেডম্যান ও কার্বারিদের নিকট ‘তথাকথিত সন্ত্রাসী’দের তালিকাসহ গ্রামের জনসংখ্যার তালিকাও চেয়েছে।

এ বিষয়ে ব্লগার ও অ্যাক্টিভিষ্ট পাইচিং মং মারমা বলেন, `তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম পাহাড়িরা সাপ, ব্যাং, জোঁক-খেকো জংলী। জংলী তো জঙ্গলেই থাকবে, এই জঙ্গল-ওই জঙ্গলে গিয়ে বসতি গড়বে; যেমনটা তারা আদিম পন্থায় গড়ে আসছে শত বছর ধরে। শত বছর আগে তো রাষ্ট্রও ছিলো না- যারা কারণে অকারণে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে জান-মাল কেড়ে নেবে। এতকাল দুর্গম জঙ্গলে গিয়ে বসতি গড়া অবৈধ ছিলো না, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিলো না, আজকাল হচ্ছে। অধুনা রাষ্ট্র ‘আদিবাসী’র স্বাভাবিক জীবনাচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। জুমচাষি জুমের পাহাড়ে গিয়ে জুমঘর তুলতে পারবে না- সেটাও হয়ে যাবে সন্ত্রাস।’

সরকারিভাবে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা ‘আদিবাসী’দের ক্রিমিনালাইজ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘একটা জনগোষ্ঠিকে ক্রিমিনালাইজ করলে ইচ্ছামত জুলুম-নিপীড়ন জায়েজ করা যায়। কাশ্মীরিরা ক্রিমিনাল, উত্তরপূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের বাসিন্দারা শুধু ক্রিনানালই নয়- তারা ক্যানিবাল, স্যাভেজ, ট্রাইব ইত্যাদি। জাত্যান্ধ বাঙালি কাশ্মীর, প্যালেস্টাইন দেখে। নিজের পৈশাচিকতায় চোখে ঠুলি এঁটে ফ্রান্স নিয়া মধ্যপ্রাচ্য নিয়া চিল্লায়! অথচ পাহাড় দেখে না।’

প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি আরও বলেন, ‘সেটলার আর রোহিঙ্গারা যে হাজার হাজার একর জমি দখল করে নতুন বসতি গড়ে সেটা কি সন্ত্রাস নয়? সরকারী বন্দুক দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আদিবাসীর মাটি কেড়ে নিলে তা কি সন্ত্রাস নয় ধর্মাবতার?’

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত/প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More