ঢাকায় ৩ নারী সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন

ধর্ষক জওয়ানদের সাজা, রাঙামাটি ডিসি’কে প্রত্যাহার দাবিসহ ১০ ফেব্রুয়ারি সড়ক নৌপথ অবরোধের ডাক

0

ঢাকা :  আজ শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১:৩০টায় পুরান পল্টনস্থ বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোশিয়েসন হলরুমে তিন নারী সংগঠন (সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, সিপিবি নারী সেল ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন) বিলাইছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান কর্তৃক দুই বোনকে ধর্ষণের বিচার ও সাজা দাবি করে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জলি তালুকদার (সদস্য, সিপিবি নারী সেল) ও শম্পা বসু (সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম)। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। তারা আগেবাগেই হলরুমে ঢুকে মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে চাইলেও তাতে ভড়কে না গিয়ে আয়োজকরা যথারীতি নির্ধারিত সম্মেলন শুরু করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নিরূপা চাকমা হাসপাতালে নারী ও শিশু ওয়ার্ডে পুলিশ প্রহরায় যৌন নিপীড়নের শিকার তরুণীদের দেখতে পেয়ে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হবার কথা জানান। নির্যাতিত তরুণীর কাছ থেকে তারা ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। ঘটনার দিন ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ৪ জওয়ান তল্লাশির নামে বাড়িতে ঢুকে বন্দুক তাক করে তরুণীকে ধর্ষণ করে। ছোট বোনকেও ধর্ষণ করতে চাইলে তার চিৎকারে সুবেদার মিজান ঘটনাস্থলে যায়। সুবেদারের নিকট ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করলে ১০০টাকা ধরিয়ে দিয়ে সুবেদার তরুণীকে চুপ থাকতে বলেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, তিন সংগঠনের প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসক, পুলিশের এডিশনাল এসপিসহ চাকমা সার্কেলের রাণী ইয়েন ইয়েন ও স্থানীয় মুরুব্বী-জনপ্রতিনিধিদের সাথেও সাক্ষাত করে। হাসপাতালে মারমা স্টুডেন্টস ফোরামের কর্মীদের সাথেও তাদের কথাবার্তা হয়। রাণী ইয়েন ইয়েন প্রতিনিধি দলকে সাধুবাদ দেন এবং তাদের কার্যক্রমের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন।

ধর্ষণের মত গুরুতর ও স্পর্শকাতর নারী নির্যাতনের ঘটনায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের মন্তব্য ও আচরণে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ব্যথিত হবার বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিনিধি দলের অপর দুই সদস্য জলি তালুকদার ও শম্পা বসু সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে জোরালো ভাষায় পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন। তারা কুমিল্লার সোহাগী জাহান তণু ধর্ষণ ও হত্যার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিন নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার, ধর্ষক সেনা জওয়ানদের সাজা প্রদানসহ ছয় দফা দাবি এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। হিল উইমেন্স ফেডারেশন আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটিতে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। তিন সংগঠন যৌথভাবে ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সারা দেশে জনমত গঠনের লক্ষ্যে গোল টেবিল বৈঠক করবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক চৈতালী চাকমা, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক কইংজনা মারমা ও কেন্দ্রীয় সদস্য রেশমি মারমা। সংবাদ সম্মেলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন সংগঠনের অগ্রসর কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত দাবিসমূহ হলো,
১। অবিলম্বে ডাক্তারি পরীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ পূর্বক ধর্ষক জওয়ানদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
২। ধর্ষিত কিশোরী দুই বোনকে সামাজিকভাবে পূনর্বাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
৩। ধর্ষিত কিশোরীর অভিভাবকদের ওপর থেকে নজরদারি ও চলাফেরার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে তাদের বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে দেয়া হোক।
৪। সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন রাঙ্গামাটির বর্তমান জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে একজন যোগ্য প্রশাসক সেখানে নিয়োগ দেয়া হোক।
৫। সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ সংস্থায় সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োগের আরো সতর্কতা অবলম্বন করা হোক।
৬। ফারুয়া সেনা ক্যাম্প-এ দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাসহ ২১ জানুয়ারি অরাপাড়ায় অভিযান চালানো সেনা জওয়ানদের প্রত্যাহার করা হোক।

উল্লেখ্য, গেল ২৮ জানুয়ারি রাতে তিন নারী সংগঠনের আট সদস্যের প্রতিনিধি দল রাঙামাটিতে অনুসন্ধানী সফরে যায়। হাসপাতালে ভিকটিম ও অন্যান্যদের সাথে সাক্ষাত শেষে আজ প্রতিনিধি দলটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরে এবং ছয় দফা দাবিনামাসহ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

————–

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্য (হুবহু):

বিলাইছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান কর্তৃক মারমা সম্প্রদায়ের দুই বোনকে যৌন নিপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে রাঙ্গামাটিতে অনুসন্ধানী সফর শেষে
তিন নারী সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, ৫৮/১-এ পুরানা পল্টন, ঢাকা

 প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আমাদের সংগ্রামী শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। অনেক দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে সাম্প্রতিক কালে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান কর্তৃক মারমা দুই বোন ধর্ষণ ঘটনাসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় তুলে ধরার লক্ষ্যে আমরা সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছি। আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দেয়ার জন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

আমরা আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২৮ জানুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। ২৯ জানুয়ারি সকালে রাঙ্গামাটি পৌঁছে তদন্ত কাজ শুরু করি। প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে ভিক্টিমদের দেখতে যাই। সেখানে পৌঁছে দ্বিতীয় তলায় নারী ও শিশু ওয়ার্ডে পুরুষ পুলিশের প্রহরায় ভিক্টিমদের দেখতে পেয়ে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হই। আমাদের পক্ষ থেকে সাথে সাথে আপত্তি জানানো হয়। হাসপাতালে চাকমা সার্কেল-এর রাণী ইয়েন ইয়েন এর নেতৃত্বে কয়েক জন সেচ্ছাসেবক ভিক্টিমদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিতে দেখতে পাই। রাণী ইয়েন ইয়েন-এর সাথে আমাদের প্রতিনিধি দলের কথা হয়। ভিক্টিমদের হাসপাতালে আনার পর থেকেই তিনি নিজে হাসপাতালে গিয়ে তাদের নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছেন। আমাদের প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি হাসপাতালে গিয়ে ভিক্টিমদের সাথে সাক্ষাত করায় তিনি আমাদের সাধুবাদ দেন। আমাদের কার্যক্রমের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান এবং আমাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন। রাণী ইয়েন ইয়েন ছাড়াও আমরা স্থানীয় মুরুব্বী, স্থানীয় নারী জনপ্রতিনিধি ও হাসপাতালে ভিক্টিমদের সহায়তা প্রদানকারী মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কর্মীদের সাথেও মত বিনিময় করি। আমরা লক্ষ্য করেছি প্রত্যেকেই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। বিশেষ করে ভিক্টিমের অভিভাবকদের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি ও সেনা নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি কেউই মেনে নিতে পারছেন না।

ঘটনা ঘটেছিল ২১ জানুয়ারি দিবাগত রাত দেড়টায়। হাসপাতালে আনা হয় ২৩ জানুয়ারি, অর্থাৎ দু’দিন পর। হাসপাতালে ভর্তি হবার পাঁচ দিনের মাথায় ঢাকা থেকে গিয়ে আমরা দেখা করি, তখনও পর্যন্ত অপরাধীদের গ্রেফতার বা আইনী ব্যবস্থা কিছুই করা হয় নি। উল্টো ভিক্টিমদের আসামীর মতো সশস্ত্র পুলিশ প্রহরা ও কঠোর গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখার দৃশ্য দেখতে পেয়ে নারী হিসেবে আমরা ভীষণ ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হই। আমরা এও লক্ষ্য করি, ভিক্টমদের সাথে বাইরের কাউকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছিল না। তারা মারমা সম্প্রদায়ের হওয়ায় নিজেদের মারমা ভাষায় কথা বলতেও ছিল নিষেধাজ্ঞা, সেটি আমাদের আরও অবাক করে দেয়। আমরা আরও জেনেছি, মারমায় বলাবলি করলে তা অনুবাদ করে কর্র্তৃপক্ষের নিকট জানানোর জন্য দালালও ভাড়া করে রাখা হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি দলে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দু’জন কর্মী ছিলেন, তারা আজকের সংবাদ সম্মেলনেও আমাদের সাথে আছেন। তারা সুকৌশলে পূর্ব-পরিচিতের ভান করে ভিক্টিমদের সাথে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা জেনে নেন।

প্রকৃত ঘটনা :
২১ জানুয়ারি অন্য এক মারমা তরুণীকে টার্গেট করে সেনা জওয়ানরা ঐ গ্রামে যায়, সন্ত্রাসী খোঁজার বাহানায় এসব করছে নিরাপত্তা বাহিনী। তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সেনা জওয়ানরা গ্রামে প্রবেশ করে। ৪ জওয়ান ভিক্টিমের বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করে। বাড়িতে তারা তিন ভাইবোন ছিল, দু’বোন আর ছোট ভাই। সে জওয়ানদের মধ্যে দু’ধরনের ইউনিফরম বুঝতে পারে। রাতে চেহারা চেনা যায় নি।
দুই জওয়ান বন্দুক তাক করে বড় বোন (১৮)-কে ধর্ষণ করে। ছোট বোন (১৪)-কেও ধর্ষণের উদ্দেশ্যে শ্লীলতাহানি করলে সে চিৎকার শুরু করে, এতে বাইরের অন্য দল থেকে সুবেদার মিজান এসে কী হয়েছে জানতে চাইলে তারা ঘটনা জানায়। সুবেদার মিজান ধর্ষিতার হাতে ১০০ টাকা ধরিয়ে দিতে চায় এবং চুপ থাকতে বলে। বাইরে প্রচার করলে মান সম্মান চলে যাবে বলে ভয় দেখায়। ঘৃণা আর ক্ষোভের সাথে তরুণী তা প্রত্যাখ্যান করে। যৌন নিপীড়নের শিকার মারমা তরুণীটি স্কুলে যায় নি, বাংলাও বলতে পারে না। তার ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছে, সে কিছুটা বাংলা বোঝে। বাংলা-চাকমা মিশিয়ে সে ঘটনা কিছুটা বোঝাতে পারে।
আমাদের প্রতিনিধি দলের মারমা সম্প্রদায়ের সদস্যরা রাঙ্গামাটি হাসপাতালে সরাসরি ভিক্টিমের সাথে কথা বলে ধর্ষণ বিষয়টি নিশ্চিত হয়। যৌন নিপীড়নের শিকার তরুণী তাদের জানায়, তখনও (২৯ জানুয়ারি) তার রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিল। ঘটনা ধামাচাপা দিতে সেনা কর্তৃপক্ষ জেট বোট দিয়ে বিলাইছড়ি থেকে অভিভাবকদের রাঙ্গামাটি সদরে এনে সংবাদ সম্মেলন করায়। এতে রাসেল মারমা নামের এক স্থানীয় দালালকে দিয়ে অভিভাবকদের বক্তব্য ভুল অনুবাদ করিয়ে ফলাওভাবে প্রচার করে। উক্ত ভিডিওতে মারমা ভাষ্যের বাংলা অনুবাদ পুরোপুরি ভুল ও বিকৃত, মারমা ভাষা বুঝতে সক্ষম যে কেউ তা ধরতে সক্ষম হবেন। সেনা নির্দেশনায় অভিভাবকদের বক্তব্য বিকৃতভাবে অনুবাদকারী রাসেল মারমার মিথ্যাচার উন্মোচন করে তার উচিত সাজা হওয়া দরকার। স্থানীয় প্রশাসন, সেনা ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যেভাবে মিথ্যাচার হচ্ছে, তা অচিরে বন্ধ করা উচিত।

সাংবাদিক বন্ধুরা,
রাঙ্গামাটি জেলায় সংঘটিত ধর্ষণের মত স্পর্শকাতর ও গুরুতর নারী নির্যাতন বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ঘটনা জানার জন্য সাক্ষাত করতে গেলে, তিনি আগ বাড়িয়ে ধর্ষণের ডাক্তারি রিপোর্ট না দিতেই, ‘গোসল করে ফেলেছে, দেরী হয়েছে, আলামত নষ্ট হয়েছে ——-’ ইত্যাদি মন্তব্য করেন। আমরা জেলা প্রশাসকের মতো একজন পদস্থ কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য প্রত্যাশা করি নি। তিনি যদি চিকিৎসকদের আগে রিপোর্ট দিয়ে ফেলেন, তাহলে ফলাফল কী হবে আঁচ করতে অসুুবিধা হয় না। বলতে গেলে আমরা জেলা প্রশাসকের কথাবার্তায় হতাশ হয়েছি।
আমাদের বসিয়ে রেখে তিনি ল্যাপটপে মনোযোগী ছিলেন, ধর্ষণের বিষয়টি তার কাছে অনেকটা উপেক্ষার করার মত ব্যাপার মনে হয়েছে। তাছাড়া আরও দুঃখজনক ও আপত্তিকর ব্যাপার হচ্ছে, জেলা প্রশাসক অহেতুক অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণ করেন ও অশোভন কথাও বলেন। রাঙ্গামাটি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও পর্যটনের বিষয় টেনে আনেন। ‘চাকমারা সরকারের প্রদত্ত উন্নয়নের কদর বুঝতে অক্ষম’ এমনই ছিল কথাবার্তার সুর। স্পষ্টতই তিনি চাকমা তথা গোটা পাহাড়িদের হেয় প্রতিপন্ন করেন। তাকে সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মনে হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কর্মীদের দিকে ইঙ্গিত করে সুবিধা বঞ্চিত দুর্বল স্বাস্থ্যের রুগ্ন নারী আন্দোলন নিয়েও তিনি তাচ্ছিল্য করেন। তার ভাষায় ‘যারা উন্নয়নের সাথে যুক্ত নয়, তারা ফ্যাকাসে, আর যারা যুক্ত তারা উজ্জ্বল বর্ণের!’ জেলা প্রশাসকের পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার যদি এই ন্যুনতম সৌজন্যতা ও ভদ্রতাবোধ না থাকে, তাহলে তিনি রাঙ্গামাটির মত একটি জাতীয় সমস্যাসংকুল এলাকায় কিভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন, সে বিষয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন এসে যায়।

আমরা সংবাদ সম্মেলনে নিম্মোক্ত দাবি উত্থাপন করছি :
১। অবিলম্বে ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশপূর্বক ধর্ষক জওয়ানদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
২। ধর্ষিত কিশোরী দুই বোনকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হোক।
৩। ধর্ষিত কিশোরীর অভিভাবকদের ওপর থেকে নজরদারি ও চলাফেরার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে তাদের বন্দীদশা থেকে ম্ক্তু করে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেয়া হোক।
৪। সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন রাঙ্গামাটির বর্তমান জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে একজন যোগ্য প্রশাসক সেখানে নিয়োগ হোক।
৫। সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ সংস্থায় সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োগের ব্যাপারে আরও সর্তকতা অবলম্বন করা হোক।
৬। ফারুয়া সেনা ক্যাম্প-এ দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাসহ ২১ জানুয়ারি অরাপাড়ায় অভিযান চালানো সেনা জওয়ানদের প্রত্যাহার করা হোক।
উপরোক্ত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এইচডব্লিউএফ এককভাবে এবং তিন সংগঠন যৌথভাবেও কর্মসূচি গ্রহণের আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা তিন সংগঠনের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটিতে অনুসন্ধানী সফরে গিয়েছি।
এইচডব্লিউএফ ঘটনার পর পর পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশ ক’টি জায়গায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। অন্য দু’টি নারী সংগঠনসহ এইচডব্লিউএফ রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানব বন্ধনও করে। চট্টগ্রামেও বিক্ষোভ হয়েছে। প্রশাসন ডাক্তারি রিপোর্ট প্রদানে গড়িমসি করছে। আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ অব্যাহত আছে।

এইচডব্লিউএফ আজকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করছে :
* রাঙ্গামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ : ১০ ফেব্রুয়ারি

তিন নারী সংগঠন যৌথভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করছে,
* পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ গড়ে তোলা ও কর্মসূচি নির্ধারণের লক্ষ্যে গোল টেবিল বৈঠক : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ঢাকা (সময় ও ভেন্যু পরবর্তীতে ঘোষণা দেয়া হবে)

ধন্যবাদ
১। নিরূপা চাকমা, সভানেত্রী, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, কেন্দ্রীয় কমিটি
২। জলি তালুকদার, সদস্য, সিপিবি নারী সেল
৩। শম্পা বসু, সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি
৪। কিবরিয়া হোসেন, সমাজতান্ত্রি ছাত্রফ্রন্ট, কেন্দ্রীয় সদস্য
৫। কইং জনা মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন,
৬। রেশমি মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন
৭। চৈতালী চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন

———————————

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More