নান্যাচরে সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ধান্যজমি বেদখলের চেষ্টা চলছে

0
নান্যাচর(রাঙামাটি) প্রতিনিধি,
সিএইচটিনিউজ.কম
পাহাড়িদের জলেভাসা জমিগুলো বেদখলের উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তারা লাল পতাকা উড়িয়ে সীমানা দেয়।
পাহাড়িদের জলেভাসা জমিগুলো বেদখলের
উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তারা লাল পতাকা উড়িয়ে সীমানা দেয়।

রাঙামাটি জেলার নান্যাচর উপজেলাধীন নান্যাচর সদর ইউনিয়নের ১ নং মাছছড়ি মৌজার অন্তর্ভুক্ত মাছছড়ি বিলে সেনা মদদে সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ফ্রিঞ্জ ল্যান্ডের(জলেভাসা জমি) বন্দোবস্তিকৃত ধান্যজমি বেদখলের চেষ্টা চলছে৷ গত ১১ ফেব্রুয়ারী ২০১১ শুক্রবার সকাল ৯টার সময় শতাধিক সেটলার প্রায় অর্ধশত নৌকা যোগে মাছছড়ি বিলে যায় এবং সারাদিন বিল ঘিরে থাকে৷ সেখানে নান্যাচর জোনের সেনারা দুটি বোট ও একটি স্পিড বোট যোগে সারাদিন সেটলারদের পাহারা দেয়৷ সারাদিন সেখানে অবস্থান করার পর সেটলার ও সেনারা সন্ধ্যায় চলে যায়৷ চলে যাওয়ার আগে তারা জমি বেদখলের চিন্ন হিসেবে বিলের মধ্যে খুটি স্থাপন করে ৫০-৬০টি লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়৷

যে সকল সেটলার পাহাড়িদের ধান্যজমি বেদখরে উদ্দেশ্যে গিয়েছিল তাদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় জানা গেছে৷ তারা হলেন, ১৷ নুরুজ্জামান, পিতা-অজ্ঞাত,২৷ মিজান, পিতা-অজ্ঞাত, ৩৷ আল আমিন, পিতা- আলী পিসি, ৪৷ সালাম,পিতা-অজ্ঞাত, ৫৷ আব্দুল গফুর, পিতা- সমীর উদ্দিন, ৬৷ লাল মিয়া, পিতা- আবু, ৭৷ জালাল হায়দার, পিতা- বাচ্চু মিয়া, ৮৷ শাহজালাল, পিতা- আসমত আলী, ৯৷ হিরু মিয়া, পিতা- বুদ্ধি মিয়া, ১০৷ মিলন, পিতা- জব্বার, ১১৷ কাদের, পিতা- আব্দুল গফুর, ১২৷ রাধা নাথ, পিতা- অজ্ঞাত, ১৩৷ সুরেশ দেবনাথ, পিতা- অতুল দেবনাথ এবং ১৪৷ মিজানুর রহমান৷ এদের মধ্যে নেতৃত্ব দেন মিজানুর রহমান৷ তার বাড়ি নান্যাচর সদরের হাসপাতাল এলাকায়৷ জানা যায়, সে লংগদু উপজেলার আটরকছড়া থেকে নান্যাচরে বসতি স্থাপন করে৷

যে সকল পাহাড়িদের ধান্য জমি বেদখলের চেষ্টা চলছে তারা হলেন, ১. মোহন লাল চাকমা(৪১) পিতা- বীর লাল চাকমা, ২. বীর লাল চাকমা (৬০) পিতা- চিক্কধন চাকমা, ৩. ঊষাই মার্মা(৬২) পিতা-থইপ্রু মারমা, ৪. উমপ্রু মারমা (৪৬) পিতা- থইপ্রু মারমা, ৫. পূর্ণ কুমার চাকমা(৩৩) পিতা- হিরণময় চাকমা, ৭. মধুমণি চাকমা (৩০) পিতা- অসীম বিহারী চাকমা, ৮. নীলবরণ চাকমা(৩৫) পিতা- সাধন কুমার চাকমা, ৯. শশী ময় চাকমা (৩২) পিতা- জগদীশ চন্দ্র চাকমা, ১০. দয়াল মণি চাকমা, পিতা- সিংহ মণি চাকমা, ১১. আপন মণি চাকমা (৩১) পিতা- সিংহ মণি চাকমা, ১২. মন্টু চাকমা(৪১) পিতা- রঙ্গকৃষ্ট চাকমা, ১৩. রুপিল চাকমা (২৮) পিতা- সাধন কুমার চাকমা, ১৪. বিজয় চন্দ্র চাকমা (২৪) পিতা- স্রোত বিহারী চাকমা, ১৫. শান্তি বিহারী দেওয়ান(৪৫) পিতা- ভেজেন্দ্র দেওয়ান, ১৬. হিরণ ময় চাকমা (৫৫) পিতা- হরিশ্চন্দ্র চাকমা, ১৭. নীল কুমার চাকমা (৬০) পিতা- গোলক চন্দ্র চাকমা, ১৮. মায়াধন চাকমা (৬০) পিতা- মরতোয়া রঞ্জন চাকমা, ১৯. জ্যোতি রঞ্জন চাকমা (৪৫) পিতা- ইন্দ্র বসু চাকমা, ২০. সুনয়ন দেওয়ান (৪২) পিতা- কনক কুমার দেওয়ান, ২১. বীর কুমার চাকমা, পিতা- ইন্দ্র বিলাস চাকমা, ২২. শশী মিত্র চাকমা, পিতা-বিমলা রঞ্জন চাকমা, ২৩. সাবু রঞ্জন চাকমা (৪৫) পিতা- মৃত. চন্দ্রবসু চাকমা, ২৪. শাক্যপদ দেওয়ান(৩১) পিতা- মহিপতি দেওয়ান, ২৫. বান্যা চাকমা(৩৮) পিতা- মৃত. কালো বিজয় চাকমা, ২৬. বিজয় মোহন চাকমা (৫৫) পিতা- মৃত. চন্দ্রসেন চাকমা, ২৭. কিনাধন চাকমা(৬৫) পিতা- মরতোয়া চাকমা, ২৮. ঝিনুক খীসা(৪১) পিতা- উমেশ চন্দ্র খীসা, ২৯. বরুণ চাকমা (৩৮) পিতা- নতুন বিহারী চাকমা, ৩০. প্রেম কুমার চাকমা(৪২) পিতা- বীর কুমার চাকমা৷ এদের মধ্যে ঝিনুক খীসা বাদে সবাই বড়াদাম গ্রামের অধিবাসী৷ সকলের মিলে মোট ৫০ কানি বা ২০ একরের অধিকা ধান্যজমি সেটলার বাঙালিরা বেদখলের চেষ্টা করছে বলে জমির মালিকরা জানিয়েছেন৷

যেসব ধান্যজমি সেটলার বাঙালিরা বেদখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে সেসব জমি দীর্ঘদিন ধরৈ উপরেলি্লখিত পাহাড়িরা চাষাবাদ করে আসছিলেন৷ প্রতিবছর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে তারা সেখানে ধান রোপন করেন৷ তাদের নামে সব ধান্য জমি বন্দোবস্তি রয়েছে৷

ধান্য জমির মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায় হচ্ছে এই ধান্যজমিগুলো৷ তাই তারা জীবনের বিনিময়ে হলেও এই জমি হারাতে চান না৷ প্রয়োজনে তারা সেটলার ও সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতেও দ্বিধা করবে না৷

এলাকাবাসীর ধারণা সেনাদের মদদে সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের জমিগুলো বেদখলের যে পাঁয়তারা চালাচ্ছে তা সামপ্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়৷ তাদের মতে, সেনাবাহিনী ও প্রশাসন সেটলারদের দিয়ে নান্যাচরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে৷

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি বিঘ্ন খীসা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি প্রিয় লাল চাকমা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি যুথিকা চাকমা সেনাবাহিনীর মদদে সেটলার কর্তৃক পাহাড়িদের ধান্য জমি বেদখলের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ তারা বলেন, এ জমি বেদখলকে কেন্দ্র করে নান্যাচরে যদি কোন ঘটনা ঘটে তাহলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী এর জন্য দায়ি থাকবেন৷ তারা অবিলম্বে নান্যাচর সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ভূমি বেদখল বন্ধের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান৷

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More