পানছড়িতে পিসিপি’র ছাত্র সমাবেশ, সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবি

0

পানছড়ি প্রতিনিধি ।। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবিতে পানছড়িতে ছাত্র সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।

আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১) বেলা ২.০০ টায় পানছড়ি উপজেলার লোগাং উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এই ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় ও সাধারণ সম্পাদক নিকেল চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর পানছড়ি ইউনিটের সংগঠক সাইক্লোন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক বরুণ চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর সভাপতি বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর কেন্দ্রীয় সদস্য দয়াসোনা চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন এর সভাপতি আতিফ অনিক।

ইউপিডিএফ এর সংগঠক সাইক্লোন চাকমা বলেন, সরকার দেশের ভিন্ন ভাষাভাষী জাতিসত্তাসমূহকে স্বীকৃতি না দিয়ে উল্টো ”বাঙালি জাতীয়তা” চাপিয়ে দিয়ে অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।

পিসিপি’র সভাপতি বিপুল চাকমা বলেন, সরকার ৫টি জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক লেভেলে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করলেও দক্ষ শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে বইগুলো পড়ে থাকে স্কুলের আলমারিতে। পাঠদানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষনের দায়িত্ব জেলা পরিষদের ওপর বর্তায়।

তিনি আরো বলেন, জেলা পরিষদে মেধা অনুসারে শিক্ষক নিয়োগ না করে টাকার বিনিময়ে অযোগ্য, অদক্ষদের নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়া হচ্ছে। জেলা পরিষদ এখন দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করা করা হচ্ছে। অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এর মাধ্যমে শিক্ষার ভিত্তি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে।

বরুণ চাকমা বলেন, রাষ্ট্র পাহাড়ে উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে ভূমি বেদখল করছে। ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পরও ক্ষমতার জোরে চিম্বুক পাহাড়ের সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট ও সিকাদার গ্রুপ কর্তৃক ভূমিপুত্র ম্রো জনগোষ্ঠি উচ্ছেদ করে পাঁচতারকা নির্মাণ করা হচ্ছে। ‍তিনি অবিলম্বে তা বন্ধ করার দাবি জানান।

দয়াসোনা চাকমা বলেন, বায়ান্নর চেতনা সাম্প্রদায়িক ছিল না। যে জাতির ছাত্ররা মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছিল সে জাতি স্বাধীন হবার পর এখনও দেশের ৪৫টির অধিক বসবাসরত জাতিসত্তাকে সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়নি। ‍তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী নির্যাতন, খুন, গুম, অপহরণের চিত্র তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

আতিফ অনিক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসন জারি রেখে অস্ত্র উদ্ধার, তল্লাশির নামে হয়রানি ও দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা বাঙালি হয়েও এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যখন ইংরেজি পড়াশুনা করতে হয় তখন বুঝি যে আসলে নিজের মাতৃভাষায় পড়াশুনা করতে না পারলে কি পরিনাম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আস্তে আস্তে করে নিজের মাতৃভাষাকে ভুলে যেতে হয়। তিনি পিসিপির মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের লড়াইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা দাবিনামা পূর্ণবাস্তবায়নসহ প্রাথমিক শিক্ষকদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষা সুনিশ্চিত করার দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি সমাবেশস্থল থেকে শুরু হয়ে লোগাঙ বাউরো পাড়া বাজার প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More