পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এদিন: স্বাধীন রাজ্যকে জেলায় রূপান্তর (১ আগস্ট ১৮৬০)

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
আজকের এই পার্বত্য চট্টগ্রাম নামক ভূ-খণ্ডটি ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বাস্তবত বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও স্বশাসিত রাজ্য ছিল। ১৮৬০ সালের ১ আগস্ট ২২ নং আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা স্বাধীন এ ভূ-খণ্ডটিকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ নাম দিয়ে জেলায় রূপান্তর করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করে নেয়।

chtmapএ অঞ্চলের স্বাধীন মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে রাজা শের দৌলত খাঁ, সেনাপতি রুনু খাঁ ও রাজা জান বক্স খাঁ’র নেতৃত্বে ১৭৭২ থেকে ১৭৯৮ পর্যন্ত দুই যুগের অধিক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই সংঘটিত হয়। সেনাপতি রুনু খাঁ এতে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই প্রতিরোধ লড়াইয়ের মাধ্যমে তাঁরা ব্রিটিশদের দখলদারিত্ব থেকে এ অঞ্চলকে মুক্ত রেখেছিলেন। ১৮৬০ সালের ১ আগস্টের পর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা এ অঞ্চলকে তাদের করলগত করতে সক্ষম হয়। তবে রাণী কালিন্দীর সময় পর্যন্ত তারা পুরো নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পারেনি।

দখলদারিত্ব কায়েম হওয়ার পর ব্রিটিশরা রাজস্ব আদায় ও প্রশাসনকি নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে এ অঞ্চলকে জেলা, মহকুমা, সার্কেল, মৌজা ইত্যাদিতে পুনর্গঠন, বিভক্ত এবং ইচ্ছামত সীমানা নির্ধারণ-পুনঃনির্ধারণ করেছিল। প্রশাসনিক পদগুলোর নামেও এনেছিল নানা পরিবর্তন।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ার আগে মুঘলরা এ অঞ্চলকে স্বাধীন রাজ্যের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখেছিল। তারা এ অঞ্চলকে নাম দিয়েছিল কার্পাস মহল। অন্যদিকে ফার্সি দলিলে এ অঞ্চলকে ‘জুম বঙ্গ’ বা ‘জুম মহাল’ বলে উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীন লোক কাহিনীতে এ অঞ্চলকে সা-প্রেই কূল বলা হয়েছে। ১৫৫০ সালে পর্তুগীজ ঐতিহাসিক জোয়াও ডি ব্যারেজ অঙ্কিত মানচিত্রে এ অঞ্চলটিকে ‘চকোমাস’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

১৮৬০ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হওয়ার পর থেকেই এ অঞ্চলের স্বাধীন মর্যাদা আর অক্ষূন্ন থাকেনি। ব্রিটিশ শাসকরা নানা আইন-কানুন প্রণনয়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে দীর্ঘ সময় ধরে শাসন-শোষণ করেছে।

ব্রিটিশ কর্তৃক জেলা গঠনের সময় এ অঞ্চলের আয়তন ছিল ৬,৭৯৬ বর্গমাইল। যা ১৭৬৩ সালে হ্যারি ভার্ললেস্ট জারিকৃত ফরমান অনুযায়ী এ অঞ্চলের সীমানা (উত্তরে ফেনী, দক্ষিণে সাঙ্গু, পশ্চিমে নিজাম রোড (বর্তমান ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড) ও পূর্বে কুকি রাজ্য (বর্তমান মিজোরাম ও বার্মার চিন স্টেট) থেকে বহু সংকুচিত।

লুসাই অভিযানের (১৮৯৩) সফল সমাপ্তির পর সাময়িকভাবে রণনৈতিক গুরুত্ব কমে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জেলা মর্যাদা থেকে অবনত করে মহকুমায় পরিণত করা হয়। এ সময় চাকমা অধ্যুষিত ডেমাগ্রি এলাকা মিজোরামের সাথে জুড়ে দিলে এ জেলার আয়তন দাঁড়ায় ৫,১৩৮ বর্গমাইলে। বাংলাদেশ আমলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সময় ১৯৮৪ সালে রামু উপজেলা কক্সবাজারের সাথে যুক্ত করার ফলে বর্তমানে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিনটি জেলা নিয়ে এর আয়তন ধরা হয় ৫,০৯৩ বর্গমাইল।
———————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More