পার্বত্য চট্টগ্রামে জানুয়ারি মাসে ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টা-৪, আটক-৩, নিহত-২

0

সিএইচটিনিউজ.কম:
Hillডেস্ক রিপোর্ট : পার্বত্য চট্টগ্রামে গত জানুয়ারি (২০১৫) মাসে পাহাড়ি নারীদের ওপর কমপক্ষে ৪টি ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩ জন ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হন ১ জন পাহাড়ি নারী।

সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হয়েছেন ৩জন। কমপক্ষে ৪টি বাড়িতে সেনা তল্লাশি ও ৫ জনকে শারিরীক নির্যাতন ও হয়রানি করা হয় এবং আটকের চেষ্টা করা হয় তিন গ্রামবাসীকে।

জেএসএস সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র হামলায় ১জন নিহত, ১ জন গুলিবিদ্ধ ও অপর ১ জন অপহরণের শিকার হন। এছাড়া অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় একজন।

সেটলার বাঙালি কর্তৃক রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সহ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।

নিজস্ব সূত্রে সংগৃহীত জানুয়ারি মাসের তথ্যাবলী নীচে সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো:

নারী নির্যাতন:
– ২৪ জানুয়ারি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়নের বঙ্গটিলা নামক স্থানে মো: আইয়ুব আলী কর্তৃক ২য় শ্রেণীতে পড়ুয়া ১০ বছর বয়সী এক পাহাড়ি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।

– ২৭ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ব্রিজ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মো: হাবিব কর্তৃক এক পাহাড়ি মেয়েকে(১৬) ধর্ষণ প্রচেষ্টার ঘটনা ঘটে।

– ২৮ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি শহরের পানখাইয়া পাড়ায় দেব বিকাশ বড়ুয়া (৪০) কর্তৃক এক পাহাড়ি মেয়ে (২৭) ধর্ষণের শিকার হয়।

একই দিন (২৮ জানুয়ারি) বান্দরবানের রুমায় বম সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে যাবার পথে সালাউদ্দিন বাপ্পী ও বাদশা মিয়া কর্তৃক ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক পাহাড়ি কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়।

সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক-তল্লাশি-হয়রানি:
– ৬ জানুয়ারি রামগড়ের পিলাভাঙা গ্রামের প্রতাপ সিং চাকমার বাড়িতে গুইমারা ব্রিগেড ও সিন্দুকছড়ি জোনের সেনারা তল্লাশি চালায়।

– ১১ জানুয়ারি দুপুরে খাগড়াছড়ির ভাইবোন ছড়া ইউনিয়নের দেওয়ান পাড়া থেকে একদল সেনাবাহিনী তিলক চাকমা ও সাধু চাকমা নামে জেএসএস(এমএন লারমা)-এর দুই সদস্যকে আটক করে।

– ১৪ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির সিন্দুকছড়ি জোনের সেনারা জসিম ও নজরুল ইসলাম বাবুল নামে দুই বাঙালিকে নিজেদের বাসা থেকে ধরে সিন্দুকছড়ি জোনে নিয়ে গিয়ে শারিরীক নির্যাতনের পর ছেড়ে দেয়।

– ১৮ জানুয়ারি সিন্দুকছড়ি জোনের সেনারা রামগড়ের হাফছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ হাফছড়ি গ্রামের বাসিন্দা রনি মারমা(৩৫) নামে এক গ্রামবাসীকে আটক করে।

– ২২ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির রামগড়ের বেলছড়ি এলাকায় সেটলার বাঙালি কর্তৃক ভূমি বেদখলকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী সেটলারদের পক্ষ নিয়ে সাধু পাড়া গ্রামের অরুণ ত্রিপুরা, গতিন্দ্র ত্রিপুরা ও জগত চন্দ্র ত্রিপুরাকে আটকের চেষ্টা চালায়।

একই দিন রাত ৮টার দিকে পাতাছড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার মানেন্দ্র চাকমাকে সেনাবাহিনী সিন্দুকছড়ি জোনে ডেকে নিয়ে ৪ দিন ধরে নজরবন্দি রেখে হয়রানি করে। অপরদিকে, দিবাগত রাত ১টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মহালছড়ির গোঁয়েইছড়ি গ্রামের নিপীড়ন চাকমা(৩০) ও রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের কালাপান গ্রামের প্রদীপ কুমার চাকমা ও পিলাভাঙা গ্রামের প্রতাপ সিং চাকমার বাড়িতে তল্লাশি চালায়।

– ২৮ জানুয়ারি রাতে সিন্দুকছড়ি জোনের সেনারা রামগড়ের উত্তর হাফছড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুইচিং মারমা(৪৩) নামে এক গ্রামবাসীকে আটক করে।

জেএসএস সন্তু গ্রুপের হামলা-অপহরণ:
– ৪ জানুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা ইউনিয়নের মরিজাবন গ্রাম থেকে জেএসএস সন্তু গ্রুপের সন্ত্রাসীরা এলিন চাকমা(২২) নামে এক যুবককে অপহরণ করে।

– ২৩ জানুয়ারি সকালে রাঙামাটির লংগদু উপজেলার দজরপাড়া বাজারে সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে দুলাল চাকমা(৩১) নামে এক নিরীহ ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়।

– ২৬ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে সেনা মদদপুষ্ট ও সন্তু গ্রুপ সমর্থিত বোরকা পার্টির সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে উচিংমং মারমা বাবু(১৮) নামে এক ইউপিডিএফ সদস্য নিহত হয়।

এছাড়া ১৪ জানুয়ারী খাগড়াছড়ির মহালছড়ির মাইসছড়ি এলাকায় অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ললিত কান্তি চাকমা নামে এক ব্যক্তি মারা যায়।

সেটলার বাঙালি দ্বারা সংঘটিত ঘটনা:
– ১০ জানুয়ারি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি ছাত্রদের সাথে ছাত্রলীগ ও সেটলার বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে এটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার রূপ নেয়। এর জের ধরে পরদিনও (১১ জানুয়ারি) শহরের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়িদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন পাহাড়ি আহত হয়। এ ঘটনায় রাঙামাটি শহরে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ জারি হয়।

– ১৮ জানুয়ারি খাগড়াছড়ির রামগড়ে জমিতে পানি তোলাকে কেন্দ্র করে সেটলার বাঙালি মো: আব্দুল মান্নানের কোদালের আঘাতে মম মার্মা নামে এক পাহাড়ি আহত হয়।

– ২২ জানুয়ারি রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার বগাছড়ি সেটলার পাড়ার পাশ থেকে চান্দি মারমা(২৬) নামে এক পাহাড়িকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া যায়।
——————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More