পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ সিদ্ধান্ত
সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবেশ পথে যেসব চেকপোষ্ট রয়েছে সেগুলোকে আরও সক্রিয় করা, যৌথ অভিযান পরিচালনাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে ১১টি নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত ৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন’র সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সেগুলো হচ্ছে-
১। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি’র উন্নয়ন প্র্রকল্প মনিটর: বিগত ১০ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি কর্তৃক ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও ফলাফল প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
২। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, মাদকদ্রব্য পাচার, অস্ত্র চোরাচালান রোধে সমম্বিত অভিযান পরিচালনা: শান্তিচুক্তি বিরোধী সশস্ত্র সংগঠন এবং স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র চোরাচালান রোধকল্পে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার এর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়;
৩। সিএইচটি কমিশনের নাম সংশোধন: কোন আইনগত ভিত্তি না থাকায় সিএইচটি কমিশনের নাম সংশোধন করে ‘কমিশন’ শব্দটি বাদ রেখে অন্য কোন নাম রাখার বিষয়ে অনুরোধ করা হয়;
৪। বিদেশী নাগরিকদের পার্বত্যাঞ্চল ভ্রমণে Code of Conduct প্রণয়ন করা: কূটনৈতিকগণ ছাড়া সাধারণ বিদেশী নাগরিকগণ পার্বত্য চট্রগ্রাম ভ্রমণ করতে চাইলে অন্তত একমাস পূর্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করবেন; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনুমতি প্রদান করবে; অনুমতিপ্রাপ্ত বিদেশী নাগরিকগণ সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক/ পুলিশ সুপারের নিকট তাদের উপস্থিতি/ভ্রমণসূচি দাখিল সাপেক্ষে ভ্রমণ করবেন; কূটনৈতিকগণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমতি গ্রহণ করে পার্বত্য চট্রগ্রাম ভ্রমণ করবেন;
৫। দেশী-বিদেশী ব্যক্তি/সংস্থা কর্তৃক পাবর্ত্য অঞ্চলে সভা অনুষ্ঠান: কোন দেশী-বিদেশী ব্যক্তি/সংস্থা কর্তৃক পার্বত্যাঞ্চলে উপজাতীয়দের সাথে সাক্ষাত কিংবা বৈঠক করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী/বিজিবি এর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
৬। ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সাথে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয় সাধন: পার্বত্য চট্রগ্রামের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্কলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সাথে পারস্পরিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ দায়িত্ব পালন করবে;
৭। বিজিবি’র সক্ষমতা বৃদ্ধি: হেলি সাপোর্ট ও চিকিৎসাসহ অন্যান্য যেসব বিষয়ে বিজিবি’র লজিষ্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন সেসব বিষয়ে বিজিবি’র চাহিদার প্রেক্ষিতে এএফডি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৮। ভারত ও মিয়ারমারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অরক্ষিত সীমান্তের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিমিত্ত প্রস্তাব প্রেরণ: ভারত ও বাংলাদেশের সাথে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রামের ৪৭৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে ইতোমধ্যে গৃহীত/বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনাসহ আবশ্যকীয় স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাব বিজিবি প্রেরণ করবে;
৯। স্থানীয় জনগণ/উপজাতীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা: পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় জনগণ/ উপজাতীদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবি তাদের নবগঠিত সেক্টর/ব্যাটালিয়ন/বিওপি ও অন্যান্য স্থাপনার জন্য অধিগ্রহণকৃত জমিতে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
১০। চেকপোষ্টগুলো সক্রিয় করা: পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবেশ পথে যেসব চেকপোষ্ট রয়েছে সেগুলোকে আরও সক্রিয় করতে হবে।
১১। পুলিশ/আনসার বাহিনীতে চাকুরীরত প্রাক্তন শান্তিবাহিনীর সদস্যদের অন্যত্র বদলীকরণ: পার্বত্য জেলা সমূহে পুলিশ/আনসার বাহিনীতে কর্মরত প্রাক্তন শান্তিবাহিনীর সদস্যদের পর্যায়ক্রমে অন্য জেলায় বদলির ব্যবস্থা করতে হবে।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, আনসার ভিডিপি’র মহাপরিচালকগণ, গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজিবির কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।