পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
সিএইচটিনিউজ.কম
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগাম মহানগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।“চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তা মানি না, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল কর” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ আজ ৮ জুলাই শুক্রবার চট্টগ্রামে এক ছাত্র সমাবেশের আয়োজন করে।এ সমাবেশের মধ্যে দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক কমিটি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়৷
আজ সকাল সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী হলেঅনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমেন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগাম মহানগর শাখার সভাপতি জিকো মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের চট্টগাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা এম এম পারভেজ লেলিন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক সভাপতি ও ইউপিডিএফ-এর সংগঠক রিকো চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাবেক কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক ও ইউপিডিএফ-এর সংগঠক মিঠুন চাকমা৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রোনাল চাকমা সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন৷
দুই পর্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রথম পর্ব সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলে৷ এতে সভাপতিত্ব করেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিরর আইন বিভাগের ছাত্র সুকৃতি চাকমা৷ এরপর বিকাল ২:৩০ থেকে ৪টা পর্যন্ত দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়৷ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিমন চাকমা এতে সভাপতিত্ব করেন৷
বক্তারা বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সরকার বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহের অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে৷ এর বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ দেশের অপরাপর অঞ্চলে বসবাসরত ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসমূহ বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়া সংবিধান কিছুতেই মেনে নেবে না৷
বক্তারা আরো বলেন, শেখ মুজিব যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিগুলোর ওপর জোর করে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার কন্যা শেখ হাসিনা পঞ্চম সংশোধনীতে “বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি” উল্লেখ করে তা বাস্তবায়ন করেছেন৷ এর মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগের মুখোশ পুরোপুরি উন্মোচিত হয়েছে৷ বক্তারা অবিলম্বে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে স্বীকৃতি ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান৷
বক্তারা বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের সময় প্রতিবাদ না জানানোর কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন সাংসদের অথর্ব ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, পার্বত্যবাসীর স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করতেই এলাকাবাসী তাদের নির্বাচিত করেছিল৷ কিন্তু তারা ব্যক্তি ও গোষ্ঠিগত মতা ও সুযোগ-সুবিধা অুন্ন রাখতে নিজেদের জাতিসত্তার পরিচিতি বিসর্জন দিয়ে সরকারী দলের পাল্লা ভারি করার কাজটি করেছেন৷ এতে করে তারা নিজেরাই প্রমাণ দিলেন তারা জনপ্রতিনিধি নন, পুরোপুরিই সরকারী লোক৷
বক্তারা বলেন, মতার জোরে, বল প্রয়োগ করে অনেক কিছু করা যায়, কিন্তু এক জাতিকে অন্য একটি ভিন্ন জাতিতে রূপান্তরিত করা যায় না৷ পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘকাল ধরে বসবাস করে বসবাসরত ভিন্ন ভিন্ন জাতিসমূহকে কিছুতেই বাঙালি বানানো যাবে না৷ আওয়ামী লীগ সরকারের সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে বাঙালি বানানোর এই ঘৃণ্য অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য বক্তারা ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান৷
সমাবেশ শেষে উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে সুকৃতি চাকমাকে আহ্বায়ক ও রিবেঙ চাকমাকে সদস্য সচিব করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর আহ্বায়ক কমিটি ও শিমন চাকমাকে আহ্বায়ক ও রাতুল চাকমাকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়৷ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমেন চাকমা কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান৷