পিসিপি’র খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শাখার ৪র্থ কাউন্সিল সম্পন্ন
সিএইচটি নিউজ বাংলা, ১ মে ২০১৩, বুধবার
‘শাসকগোষ্ঠির ভাগ করে শাসক কর নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ রুখে দাঁড়ান’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শাখার ৪র্থ তম কাউন্সিল আজ ১ মে বুধবার সকাল ১০.৩০টায় খাগড়াছড়ি সদরে অবস্থিত ঠিকাদার সমিতির ভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শহীদদের স্মরণ করে শোক প্রস্তাব পাঠের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধনী আলোচনা সভা শুরম্ন হয়। শোক প্রস্তাবে শহীদদের পাশাপাশি স্মরণ করা হয় ঢাকার সাভারে সদ্য ঘটে যাওয়া রানা প্লাজা ধসে নিহত পোষাক শ্রমিকদের। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মনিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী পপি চাকমা।
কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক হিরোহিত তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক ও পিসিপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক সুপ্রীম চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি নিরূপা চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থুইক্য চিং মারমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ আহবায়ক জুপিটার চাকমা। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সুনীল সান্তাল এবং সভা পরিচালনা করেন কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব টনি ত্রিপুরা।
আলোচনা সভায় অংগ্য মারমা বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, স্বৈরাশারী এরশাদের পতন সহ বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তেমনি ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামেও ১৯৮৯ সালে ২০ মে পিসিপি গঠনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র সমাজ একত্রিত হয়েছে, যা এখনো বিদ্যমান।
থুইক্য চিং মারমা বলেন, আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য শুরু থেকে পিসিপি’র এই ছাত্র আন্দোলনকে ধ্বংস করে দিতে সরকার বিভিন্ন নীতি গ্রহন করেছে। যার ধারাবহিকতায় পাহাড়িদেরকে ভাগ করে শাসন করার নীতি গ্রহন করে বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। একদিকে পাহাড়িদের ভাগ করে রেখেছে, অন্যদিকে সংবিধান সংশোধন করে সকল জাতিসত্তাসমূহের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ সারাদেশের সংখ্যালঘুদের ধ্বংস করার নীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
নিরূপা চাকমা বলেন, আমাদের সমাজকে পঁচন ধরানোর জন্য শাসকগোষ্ঠী বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তাই সামাজিক অবক্ষয় রোধে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
সুপ্রীম চাকমা বলেন, ছাত্র সমাজ ও জনগণকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত রেখে জাতিগত নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে এই দেশের শাসক শ্রেণী। তাই আমাদেরকে এসব ষড়যন্ত্র মোকবেলা করে এবং শাসকগোষ্ঠীর পাতানো ফাঁদে পা না দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রথম অধিবেশন শেষ করে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিল অধিবেশন পরিচালনা করেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক থুইক্য চিং মারমা। অধিবেশন শেষে টনি চাকমাকে সভাপতি, টনি ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক এবং সুনীল সান্তালকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি করে সাধারণ সদস্যসহ ২৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থুইক্য চিং মারমা নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।
কাউন্সিল অধিবেশন শেষে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি ঠিকাদার সমিতি ভবন থেকে শুরু হয়ে মহাজন পাড়ায় সূর্যশিখা ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এরপর র্যালিটি চেঙ্গী স্কোয়ার, উপজেলা হয়ে স্বনির্ভর বাজার ঘুরে ঠিকাদার সমিতি ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।