পিসিপি’র ঢাকা শাখার কাউন্সিল সম্পন্ন
ঢাকা : “সরকারি ফাঁদে পা না দিয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুক্ত হোন! পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন ও মাদকের বিস্তার ঘটিয়ে ভূমি বেদখল ও জাতিসত্তা ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান!” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর ঢাকা শাখার ১৪তম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এতে রোনাল চাকমাকে সভাপতি, রিয়েল ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক এবং রিপন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু হলরুমে আজ মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক রোনাল চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক মাইকেল চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি সিমন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, ছাত্র গণমঞ্চের সভাপতি সাঈদ বিলাস ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি নেতা রিপন চাকমা। কাউন্সিল সভা পরিচালনা করেন পিসিপি নেতা রিয়েল ত্রিপুরা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চরম ফ্যাসিবাদ চলছে। সেনা শাসনে জনগণ পিষ্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১১ নির্দেশনা জারির পর দমন-পীড়ন পূর্বের চাইতে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত সেনা তল্লাশি, হয়রানি, ধরপাকড় চলছে। সেনা-সেটলার উৎপাতে জনগণের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
পাহাড়ে সেনানিবাসসমূহ উগ্রসাম্প্রদায়িক জঙ্গীর আঁতুরঘরে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বক্তারা আরো বলেন, সেনা আস্তানা থেকে পাকিস্তানি ভাবধারার কতিপয় কর্মকর্তা সেটলারদের সাম্প্রদায়িক উসকানী মদদ যুগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে সেটলাররা প্রকাশ্যে সরকারী কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের হুমকি দিচ্ছে,গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। ২০ জুলাই খাগড়াছড়িতে পিসিপি কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। ক্যান্টনমেন্টে গুরুতর আহত অবস্থায় সেনাদের হাতে তুলে দেয়। ক্যান্টনমেন্টে তাদের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে গুরুতর জখম করে থানায় পাঠিয়ে দেয়।
ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা বলেন, ছাত্র-যুব সমাজ হচ্ছে জাতির কাণ্ডারী। এই ছাত্র-যুব সমাজকে ধ্বংসের জন্য নানা ধরনের চক্রান্ত চলছে। সুপরিকল্পিতভাবে পাহাড়ে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে পাকিস্তানপন্থী এক শ্রেণীর জঙ্গী মনোভাবাপন্ন সেনা কর্মকর্তা ঘৃণ্য সন্ত্রাসী কর্মে মদদ দিয়ে চলেছে। সাম্প্রদায়িক কর্মকা-ে উস্কানি দিচ্ছে। জঙ্গী ভাবধারার বখাটে সেটলার যুবকদের অর্থ দিয়ে পাহাড়ি ছাত্রদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে।তার পাশাপাশি ছাত্র-যুব সমাজকে ধ্বংসের লক্ষ্যে নানা ধরণের কলাকৌশল খাটাচ্ছে। তিনি তাদের খপ্পর থেকে ছাত্র ও যুবকদের সতর্ক থাকার এবং পাকিস্তানপন্থী আইএসআই মদদপুষ্ট চিহ্নিত সেনা কর্মকর্তদের মুখোশ খুলে দেয়ার আহ্বান জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, বর্তমানে পর্যটন স্থাপন করে ছাত্র-যুব-নারী সমাজকে ধ্বংসের চক্রান্ত চলছে। কুমিল্লা সেনানিবাসে সাম্প্রতিককালে সংঘটিত তনু ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড প্রসংগে তিনি বলেন, দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তি না দেয়ার কারণে সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ।বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর কল্পনা অপহরণের বিচার ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে.ফেরদৌসের সাজা না হওয়ায় অপরাধের দায়ভার রাষ্ট্র কাঁধে তুলে নিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
থুইক্যচিং মারমা বলেন, অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র-যুব সমাজকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাঈদ বিলাস বলেন, পিসিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মত একটা উৎসবমুখর কর্মসূচী পণ্ড করে দেয়া থেকে বুঝা যায় শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ে কতটুকু ফ্যাসিষ্ট শাসন কায়েম করেছে। শাসকগোষ্ঠী পিসিপি তথা আন্দোলনকামী শক্তিকে ভয় পায় বলে এ ধরণের হীন কাজ করেছে।
ফয়সাল মাহমুদ বলেন, সারাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে তা আরো ভয়াবহ। পাকিস্তানী কায়দায় শাসকগোষ্ঠী দমন-পীড়ন চালাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভা শেষে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। নতুন কমিটি সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি কেন্দ্রীয় সভাপতি সিমন চাকমা।কমিটি গঠনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি র্যালি বের করা হয় ।
——————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।