পুলিশের বাধার মুখে চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
চট্টগ্রাম : পুলিশের বাধার মুখে চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
আজ ৫ এপ্রিল, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক যুব সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ সফল করার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামের শত শত যুবক-যুবতি জড়ো হন শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে। কিন্তু সমাবেশ উদ্বোধন ঘোষণার আগেই চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন একদল পুলিশসহ এসে মাস্তানি কায়দায় সমাবেশের মঞ্চ থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। এরপর ব্যানার ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয় সমাবেশ।
‘আসুন, সেনা-শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, দালাল, ছদ্মবেশী চর, গণদূশমন ও প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিরোধ করি’ এই শ্লোগানে এবং ‘ভূমি সংক্রান্ত ৯ দফা দাবি আদায় ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রাম বেগবান করতে ডিওয়াইএফ-এর পতাকাতলে সমবেত হোন’ এই আহ্বানে আয়োজিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ও যুব সমাবেশ উদ্বোধন করেন ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য শহীদ অনিমেষ চাকমার সহধর্মিনী মিন্টি চাকমা ও শহীদ রুইখই মারমার সহধর্মিনী রিতা চাকমা এবং শহীদ মংশে মারমার পিতা কংজরী মারমা।
উদ্বোধক ত্রয়ের পক্ষ থেকে শহীদ অনিমেষ চাকমার সহধর্মিনী মিন্টি চাকমা সমাবেশের উদ্বোধন ঘোষণা করে বলেন, “আমার স্বামী পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের জন্য জীবন দিয়েছেন। আপনারা নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও পূর্ণস্বায়ত্বশাসন অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন।”
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা।
বক্তারা বলেন, সভা-সমাবেশ করা গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হওয়া সত্বেও যুব ফোরামের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুলিশ প্রশাসন বাধা দেওয়ার মাধ্যমে সরকারের ফ্যাসিষ্ট আচরণ ফুটে উঠেছে। সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুব-ছাত্র-নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফ্যাসিষ্ট শাসনের শৃংখল ভেঙ্গে নিপীড়িত জনগণকে মুক্ত করতে হবে।
বক্তারা সমাবেশ শুরুতে চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানার ওসি জসিম উদ্দিন কর্তৃক সমাবেশের মঞ্চ থেকে ব্যানার ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে অংগ্য মারমা বলেন, সেনা-পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামীলীগসহ বিএনপি জামাত জাতীয় পার্টিতে পাকিস্তানীপন্থীরা ঘাঁটি গেড়েছে। পাকিস্তানপন্থীদের উগ্রসাম্প্রদায়িক হামলায় (রামু, কক্সবাজার, গোবিন্দগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়) সরকার ও প্রশাসনের লোকজন জড়িত এটা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
গোবিন্দগঞ্জে নাসিরনগরের সান্তাল পল্লিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার মুল উস্কানীদাতা পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার ভিডিও চিত্র ভাইরালের মাধ্যমে জনগণ দেখেছে। তারপরও শাস্তির ব্যবস্থা না করে খাগড়াছড়িতে বদলী করা হয় এবং সর্বশেষ মহালছড়িতে আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এই ঘটনায় গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম তীব্র নিন্দা জানায় এবং সাম্প্রদায়িক হামলার হোতাদের বিচার না হওয়ায় সংখ্যালঘু জাতিসমূহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে মনে করে।
অংগ্য মারমা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আজ সেনা-শাসকগোষ্ঠীর চরম নির্যাতনের কারাগারে পরিণত হয়েছে। সমাবেশ থেকে মিথ্যা মামলায় আটককৃত ইউপিডিএফ ও গণসংগঠনের কর্মীদের নিঃশর্তে মুক্তিসহ সারা দেশে মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান। তিনি সমাবেশ থেকে দেশের জনগণের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে কোন গোপন চুক্তি বা সমঝোতায় উপনীত না হতে সরকার প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে একটি র্যালি বের করতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে ভন্ডুল হয়ে যায়।
সমাবেশে চট্টগ্রাম মহানগর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ৬ শতাধিক পাহাড়ি যুবক-যুবতি অংশগ্রহণ করেন।
—————-
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।