বান্দরবানের রুমায় সেনানিবাস সম্প্রসারণের নামে ভূমি বেদখল ও পাহাড়ি উচ্ছেদের রাষ্ট্রীয় চক্রান্তের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিএইচটিনিউজ.কম
ঢাকা: বান্দরবানে রুমায় সেনানিবাস সম্প্রসারণের নামে ৯৯৭ একর ভূমি বেদখল ও পাহাড়ি উচ্ছেদের রাষ্ট্রীয় চক্রান্তের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের উদ্যোগে আজ ২১ মার্চ শুক্রবার সকাল ১১টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি থুইক্যচিং মারমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নিরূপা চাকমা।
সমাবেশে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, সারা দেশে সেনাবাহিনীকে ৪৮ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেয়ার নামে ঘুষ দেয়া হচ্ছে। রুমায় সেনানিবাস সম্প্রসারণ সেই ঘুষেরই একটি অংশ। জাতিসত্তার জনগণকে নিজ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে সরকারের এই পাহাড়ি উচ্ছেদের চক্রান্তকে প্রতিহত করতে হবে। ২০১০ সালে বাঘাইছড়ির সাজেকেও ভূমিরক্ষা কমিটি ও সাজেক নারী সমাজ তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ভূমিরক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের বীর জনতাও সেনাবাহিনী কর্তৃক অন্যায়ভাবে ভূমি জবর দখলের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রাম গড়ে তুলেছিলেন। এবং তাদের জমি রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বান্দরবানের পাহাড়ি জনগণকেও সেনানিবাস সম্প্রসারণ, ভূমি অধিগ্রহণ এবং পাহাড়িদের নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে অনুরূপ সংগ্রামের জোয়ার তুলতে হবে। চক্রান্তমূলকভাবে পাহাড়িদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ এবং ভূমি জবর দখলকে প্রতিহত করতে হবে।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা বলেন, সারাদেশে যে ২৫টি সেনানিবাস রয়েছে তার মধ্যে ৬টি’র অবস্থান পার্বত্য তিন জেলায়। এর মধ্যে কেবল বান্দারবানে রয়েছে দুইটি। নতুন করে আরো রম্নমাতে ৯৯৭ একর জমির উপর আরো একটি সেনানিবাস করা হলে বান্দরবান জেলা হবে দেশের সবচেয়ে সামরিকায়িত এলাকা।
তিনি আরো বলেন, এমনিতে বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, আমলা এবং লুঠেরা ব্যবসায়ী পুঁজিপতিদের নামে পাহাড়িদের প্রথাগত মালিকানাধীন হাজার হাজার একর জমি বে-আইনীভাবে লীজ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শত শত পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদ করে জেলার বিশাল একটি অংশ তারা বেদখল করে নিয়েছে। এ অবস্থায় সেনানিবাস সম্প্রসারণের নামে ৯৯৭ একর পাহাড়িদের প্রথাগত মালিকানাধীন ভূমি অধিগ্রহণ করা হলে স্থানীয় সংখ্যালঘু মুরং জাতিসত্তার জনগণসহ অরো কয়েকটি সংখ্যালঘুজাতির জনগণ নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদের শিকার হবে এবং তাদের অস্তিত্ব চরম হুমকির মুখে পড়বে।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে সেনাবহিনীর নামে বান্দরবানের রুমাতে ৯৯৭ একর জমি বরাদ্দ বাতিল এবং পাহাড়ি উচ্ছেদের রাষ্ট্রীয় চক্রামত্ম বন্ধের দাবী জানানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এ অন্যায় জবর দখল এবং উচ্ছেদকে মেনে নেবে না। অন্যথায় ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনসমূহ পাহাড়ের সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
সমাবেশের পর একটি মিছিল প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে আবার প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে শেষ হয়।