বাবুছড়ায় উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোকে একটি পয়সাও ত্রাণ দিতে পারবো না: খাগড়াছড়ি ডিসি

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Khagrachariখাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেছেন তিনি বাবুছড়ায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া জুম্ম পরিবারগুলোকে একটি পয়সাও ত্রাণ দিতে পারবেন না। তিনি আরো বলেন একটি বিশেষ মহল বাবুছড়ায় বিজিবির বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কানি দিচ্ছে।

আজ শনিবার খাগড়াছড়ি জেলায় নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের সাথে একান্ত বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। তার বাস ভবনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত উক্ত বৈঠকে তিনি আরো বলেন, জেলার আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মিটিঙে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সাথে দেখা হলেও বিভিন্ন বিষয়ে একান্তভাবে তাদের সাথে কথা বলার সময় হয় না বলেই তিনি এই বৈঠকটি ডেকেছেন।

বৈঠকে রামগড়, লক্ষীছড়ি ও পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানরা ছাড়া বাকি উপজেলার চেয়ারম্যানগণ উপস্থিত ছিলেন।

ডিসি বলেন, দীঘিনালায় বিজিবির ৫১ নং ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের জন্য ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারী নিয়ম কানুন মেনেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কাজেই এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা যাবে না।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান চঞ্চুমণি চাকমা উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোকে ত্রাণ দেয়ার দাবি জানালে, ডিসি বলেন তিনি একটি পয়সাও ত্রাণ দিতে পারবেন না। তবে তাদের পুনর্বাসনের জন্য আলোচনা হতে পারে।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, গতকাল ঢাকা থেকে সাংবাদিক বাবুছড়া ঘুরে এসেছেন। আগামী ২ ও ৩ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন আসছে। এসব করেও কিছু হবে না।

ডিসির বক্তব্য সম্পর্কে দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পরিতোষ চাকমার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোকে ত্রাণ দিতে ডিসির এত আপত্তি কেন? তার এই কথার মধ্যে এটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে, তিনি ওই পরিবারগুলোর সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করছেন। জেলার পাহাড়ি বাঙালি সবার প্রতি তার সমান দায়িত্ব রয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “যদি সরকারী নিয়ম কানুন মেনে অধিগ্রহণ করা হয়ে থাকে, তাহলে এতগুলো পরিবার কেন উচ্ছেদ হলো? তাছাড়া ডিসি নিজেই গত আইন শৃঙ্খলা মিটিঙে স্বীকার করেছেন যে, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের অনুমোদন নেয়া হয়নি। যদিও জমি অধিগ্রহণ বা হস্তান্তরের ব্যাপারে জেলা পরিষদের পুর্বানুমোদন নেয়া আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক। এছাড়া স্থানীয় হেডম্যান ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথেও জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে তিনি কোন আলোচনা করেননি। কাজেই এটা নির্দ্ধিধায় বলা যায় যে, জমি অধিগ্রহণ আইন কানুন মেনে ও জনগণের স্বার্থের দিকে দৃষ্টি রেখে করা হয়নি।”

একটি বিশেষ মহল জনগণকে বিজিবির বিরুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছে এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পরিতোষ চাকমা বলেন, যেখানে লোকজন উচ্ছেদ হচ্ছে, তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি হারাচ্ছে, সেখানে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য কারোর উস্কানির প্রয়োজন পড়ে না। তবে তাদের এই ন্যায়সঙ্গত প্রতিবাদ ও ন্যায্য দাবির সাথে অনেকের সহমর্মিতা ও সমর্থন থাকতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক।

পরিতোষ চাকমা প্রশ্ন করে বলেন, “সরকার যদি জনগণের জন্য হয়ে থাকে, আর স্থানীয় প্রশাসন যদি জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে থাকে, তাহলে বাবুছড়ায় নিরীহ গরীব লোকজন উচ্ছেদ করে বিজিবির সদর দপ্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত জনগণের স্বার্থে পরিবর্তন করা যাবে না কেন?”

পরিতোষ চাকমার উক্ত মতামতের সাথে প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ সমিতি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও একমত পোষণ করেছেন।

তারা অবিলম্বে দীঘিানালার যত্ন মোহন কার্বারী পাড়া থেকে বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহারের দাবি জানান। তারা বলেন, দীঘিনালায় বিজিবির সদর দপ্তর স্থাপনের কোন প্রয়োজন নেই, কারণ এখানে বিজিবির ক্যাম্প ও একটি ক্যান্টনমেন্টসহ সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর বহু ক্যাম্প রয়েছে। আর যদি প্রয়োজন হয়েই থাকে, তাহলে এমন জায়গায় তা নির্মাণ করা হোক, যেখানে লোকজন উচ্ছেদের শিকার হবে না। লোকজনকে এত কষ্ট ভোগ করতে হবে না।
————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More