বিজিবি ৫১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ সহ ৯ জনকে উকিল নোটিশ
সিএইচটিনিউজ.কম
দীঘিনালার বাবুছড়ায় জমি অধিগ্রহণ ও হামলার জের ধরে বিজিবির ৫১ ব্যাটালিয়ন-এর অধিনায়ক লে: কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ, মেজর মো: কামাল উদ্দীন, সুবেদার মেজর গোলাম রসুল ভূঁইয়া, সদস্য উত্তমকুমার দাস, মাহবুল আলম, অশোক চক্রবর্তী, সাইফুল ইসলাম, বাধন উদ্দীন ও মো: মুনিরুজ্জামানকে উকিল নোটিশ দেয়া হয়েছে।
গত ১০ জুন বিজিবি হামলায় আহত যত্ন মোহন কার্বারী পাড়ার বাসিন্দা গোপা চাকমার পক্ষে উকিল নোটিশ প্রেরণ করেন খাগড়াছড়ি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এডভোকেট সমারি চাকমা, এডভোকেট মোহাম্মদ তৈয়ব আলী ও এডভোকেট জ্ঞান জোতি চাকমা।
পাহাড়িদের উপর হামলার সাথে জড়িত কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা অথবা সদস্যের বিরুদ্ধে এই প্রথম ভিকটিমদের পক্ষে উকিল নোটিশ প্রদান করা হলো। অতীতে এ ধরনের বহু ঘটনা সংঘটিত হলেও এবং সে সব ঘটনায় অনেক নিরীহ পাহাড়ি আহত-নিহত হলেও, এতকাল হামলাকারী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য ও সেটলাররা বরাবরই জবাবদিহির আওতার বাইরে থেকে যান। এই নোটিশের মাধ্যমে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে বাবুছড়া হামলার মতো ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা যেতে পারে বলে অনেকের ধারণা।
গত ১ জুলাই ২০১৪ দেয়া উক্ত উকিল নোটিশে বলা হয়, “বিগত ১০/০৬/২০১৪ ইং রোজ মংগলবার বিকাল ৫ঘটিকার সময় নোটিশ দাতা ৫১ নং দিঘীনালা মৌজায় যত্নমোহন কার্বারী পাড়ার লোকজনকে ১ ও ২নং নোটিশ গ্রহীতার নেতৃত্বে ৩নং হইতে ১২নং সদস্যসহ অজ্ঞাতনামা আরো আনুমানিক ৩০ জন সদস্য যতœমোহন কার্বারী পাড়ার নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসীকে জোরপূর্বক অধিগ্রহণ বহির্ভুত তাহাদের নিজস্ব বাড়িঘর হইতে বাহির করিয়া দিয়া ও বাড়িঘর ভাঙ্গিয়া দিয়া উচ্ছেদের চেষ্টা করিলে গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করে। এতে আপনারা নোটিশ গ্রহীতাগণ ক্ষিপ্ত হইয়া নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসীদের উপর ধারালো অস্ত্র, লোহার রড, বন্দুকের বাট, লাঠিসোটা নিয়ে খুন ও গুরুতর আঘাতের উদ্দেশ্যে একযোগে ঝাঁপাইয়া পড়েন এবং বন্দুকের বাট দিয়ে গ্রামবাসীদেরকে আঘাত করিয়া বন্দুকের বাট ভাঙ্গিয়া ফেলেন। এতে ২নং নোটিশ গ্রহীতা বিজিবি সদস্যের লাঠির আঘাতে (ক) গোপা দেবী চাকমার হাত ভেঙে যায়, ৩নং নোটিশ গ্রহীতা বিজিবি সদস্যের বন্দুকের বাটের আঘাতে অপ্সরি চাকমা (১৬)র মাথা ফেটে যায় এবং ৪-৯ নং নোটিশ গ্রহীতা বিজিবি সদস্যের লাঠি ও বন্দুকের আঘাতে (খ) মায়ারাণী চাকমা, স্বামী-প্রদীপ চাকমা (গ) ফুলরাণী চাকমা, স্বামী- স্নেহ কুমার চাকমা মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম হয়। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাহাদেরকে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন আগাইয়া আসিয়া উদ্ধার না করিলে উক্ত বিজিবি সদস্যরা তাহাদেরকে মারিয়া ফেলিত। অন্যান্য বিজিবি সদস্যদের এলোপাথাড়ী আক্রমণে সংঘ দেবী চাকমা মধুরিকা চাকমা, আনন্দ বালা চাকমা, কমলা রতন চাকমা, শ্যামলিকা চাকমা, সুরভি চাকমা, সুবর্ণা চাকমা, স্বপন চাকমা, বিনা চাকমা সহ ১৮ জন হাতে পায়ে বুকে পিঠে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। আহত সকলেই প্রথমে দীঘিনালার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরবর্তীতে গোপা দেবী চাকমা, ফুলরাণী চাকমা, মায়ারাণী চাকমা ও অপ্সরি চাকমা খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে বিভিন্ন মেয়াদে চিকিৎসাধীন ছিলেন।”
উক্ত নোটিশে আরো বলা বলা, “ঘটনার পর আহত ব্যক্তিগণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ৩নং নোটিশ গ্রহীতা সুবেদার মেজর গোলাম রসুল ভূঁইয়াকে বাদী করিয়া থানায় গণহারে ১১১ জনকে এজাহার নামীয় আসামী এবং অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জনকে আসামী উল্লেখ করিয়া একখানা মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় বিজিবি কর্তৃক আহত নিরীহ পাহাড়ি বৃদ্ধ নারী পুরুষ ও কিশোরীদেরও আসামী হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। যার দীঘিনালা মামলা নং-২, তাং-১১.০৬.২০১৪ ইং। যাহা সম্পূর্ণ বে-আইনী ও ন্যায় বিচার এবং মানবাধিকারের পরিপন্থি।”
উকিল নোটিশে বলা হয়, “নোটিশ গ্রহীতাগণ যতœমোহন কার্বারী পাড়ায় গ্রামবাসীদের বাড়ীতে অনধিকার প্রবেশ করিয়া ভয় ভীতি হুমকি ও মৃত্যু ভয় দেখাইয়া ও এলোপাথাড়ি মারধো করিয়া গোপা চাকমার হাত ভাঙ্গিয়া দিয়া অপরাপর ভিকটিমদেরকে খুনের ও গুরুতর আঘাতের উদ্দেশ্যে লোহার রড, বন্দুকের বাট, লাঠি-সোটা দ্বারা মাথা ফাটিয়া রক্তাক্ত জখম করিয়া ও হাতে পায়ে বুকে পিঠে আঘাত করিয়া দঃ বিঃ আইনের ৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৪২৭/১০৯/৩৪ ধারার অপরাধ করিয়াছেন।”
President Ordinance এর ১০ ধারার বিধান মতে কোন ব্যক্তিকে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না, তদুপরি নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে কাউকে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করার উদ্যোগ আইন বহির্ভুত বিধায় উক্ত উকিল নোটিশ প্রদান করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে লে: কর্ণেল আবুল কালাম আজাদসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কেন প্রচলিত আইনে আইনের আওতায় এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এই মর্মে ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।