ভদন্ত চন্দ্রমণি মহাস্থবির বৈদ্য ভান্তের জীবনাবসান

0

Chandramon mohastabirডেস্ক রিপোর্ট ॥ খাগড়াছড়ির মহাজন পাড়া জনবল বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ, আলুটিলা ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট বৌদ্ধ সাধক ও ধর্মীয় গুরু ভদন্ত চন্দ্রমণি মহাস্থবিরের জীবনাবসান হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) ভোর সোয়া চারটায় নিজ বিহারে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। বৈদ্য ভান্তে নামে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন।

আগামী বছর জানুয়ারীতে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে বলে বিহার পরিচালনা কমিটির সূত্রে জানা গেছে। চলমান বর্ষাবাসের পুরো তিন মাস তাকে জনবল বৌদ্ধ বিহারে রাখা হবে। এরপর তাকে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত আলুটিলা ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহারে নেয়া হবে এবং সেখানেই তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে।

পূজনীয় বৈদ্য ভান্তে দীর্ঘ দিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। রোগের আক্রমণ বৃদ্ধি পেলে গত জুলাই মাসে তাকে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তাররা তার কিডনির ডায়ালিসিস করেন। এরপর তাকে খাগড়াছড়ি নেয়া হয়। ইতিপূর্বে তাকে চিকিৎসার জন্য দু’ বার ভারতে নেয়া হয়েছিল।

ভদন্ত চন্দ্রমণি মহাস্থবির দক্ষিণ পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলাধীন নয়াপতং মৌজাস্থ অন্তহা হেডম্যান পাড়ায় ১৯৪৯ সালের ১৪ জুন এক সদ্ধর্মপ্রাণ ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পর তার নাম রাখা হয় চাঁইগ্যা উসাই।

শৈশবেই তার বাবা নবীন্দ্র উসাই ও মা গবেরুং উসাই তাকে স্থানীয় কানাইজো পাড়া বিহারে সম্প্রদান করেন।

সেখান থেকে তিনি ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য কাপ্তাইয়ে চিৎমরম বিহারে গমন করেন। ১৯৬০ সালে তিনি শ্রামণ্য দীক্ষা লাভ করে ১৯৬২ সালে উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষা লাভের জন্য বার্মার তৎকালীন রাজধানী ইয়াঙ্গুন যান। ১৯৭৫ সালে সেখানে উপসম্পদা (ভিক্ষুত্ব) লাভ করে ১৯৮০ সালে স্বদেশে ফিরে আসেন।

এরপর তিনি খাগড়াছড়িতে হরিনাথ পাড়া বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন বিহারে অবস্থান করার পর অবশেষে ১৯৮৬ সালে মহাজন পাড়াস্থ জনবল বৌদ্ধ বিহারে অধ্যক্ষ হিসেবে সমাসীন হন। সেই থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই বিহারে অবস্থান করেন।

তিনি ২০১৪ সালে মায়ানমার সরকারের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সম্মাননা ‘স্বধর্ম জ্যোতিকা ধ্বজা’ উপাধিতে ভূষিত হন।

আজন্ম ব্রক্ষ্মচারী বৈদ্য ভান্তে সব সম্প্রদায়ের কাছে প্রিয় পাত্র ছিলেন। তিনি আজীবন মানুষের কল্যাণ সাধনায় রত ছিলেন। খাগড়াছড়ি শহরের অনতিদূরে আলুটিলা পাহাড়ের চূড়ায় ধাতু চৈত্য বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ তার অমর কীর্তি। ১৯৯৯ সালে এই বিহারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

তিনি ছিলেন অত্যন্ত সমাজ সচেতন এক মহান ব্যক্তি। তিনি কখনো তার নিজের কিংবা বিহারের উন্নতির জন্য ক্ষমতাশালীদের কাছে নত হয়ে কোন কিছু ভিক্ষা করেননি। তিনি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত দানের অর্থে বিহার স্থাপন ও পরিচালনা করে গেছেন।

মহামতি গৌতম বুদ্ধের অনুসারী বৈদ্য ভান্তে ছিলেন আগাগোড়া অসাম্প্রদায়িক। তিনি চাকমা, মারমাসহ সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি জন্য কাজ করে গেছেন। এই ঐক্য ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে দেখলে তিনি অত্যন্ত দঃখ পেতেন এবং এজন্য অনেককে ভর্ৎসনা করেছেন।

শোক প্রকাশ
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সভাপতি প্রসিত খীসা ভদন্ত চন্দ্রমণি মহাস্থবির বৈদ্য ভান্তের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সবার প্রিয় ভাজন বৈদ্য ভান্তে মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। ধর্মীয় সাধনার পাশাপাশি তিনি সমাজের উন্নতির জন্য নানাভাবে ভূমিকা রেখেছেন, যা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

এছাড়া গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা ও সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সিমন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেনের সভাপতি নিরূপা চাকমা শ্রদ্ধেয় বৈদ্য ভান্তের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন।
—————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More