খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
মাটিরাঙ্গা : খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন তবলছড়ি এলাকার বড়নাল ইউনিয়নের রাজধর কার্বারী পাড়ায় সেটলাররা হামলা চালিয়ে পাহাড়িদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গতকাল ১৫ অক্টোবর সোমবার রাত আনুমানিক ৯টার সময় ডাক বাংলা ও এর পাশ্ববর্তী এলাকার সেটলাররা জড়ো হয়ে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ তুলে রাজধর কার্বারী পাড়ায় পাহাড়িদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এ সময় তারা পাহাড়িদের ৬টি বাড়ি ও ১টি শিব মন্দির ভাংচুর ও জিনিসপত্র লুটপাট করে।
যাদের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে : হামলাকারী সেটলাররা ললি ত্রিপুরা ওরফে মিস্ত্রির কাছ থেকে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাউল লুট এবং বাড়ির দরজা-জানালা ভাংচুর করে, সাং কুমার ত্রিপুরার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা লুট করে ও বাড়ি ভাংচুর করে, মুংকরই ত্রিপুরার কাছ থেকে ২০০০ টাকা লুট এবং বাড়ি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে, কান্তিসা ত্রিপুরার কাছ থেকে একটি মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায় এবং ঘরবাড়িও আসবাবপত্র ভেঙে দেয়, পানবিটি ত্রিপুরার কাছ থেকে একটি মোবইল সেট কেড়ে নেয় এবং ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
হামলাকারী সেটলাররা মহেধর ত্রিপুরার স্ত্রী বিধাতা ত্রিপুরাকে(৬০) বেদম মারধর করে আহত করে। তাকে বর্তমানে বাড়িতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
রাজধর কার্বারী পাড়ায় মোট ২৮ পরিবার পাহাড়ির বসবাস। উপরোক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি ভাংচুর ছাড়াও সেটলাররা গ্রাম প্রধান(কার্বারী) ধমিনী কুমার ত্রিপুরার বাড়ি সহ প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় সেটলারদের হামলার ভয়ে পাহাড়িরা জঙ্গলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় যামিনী পাড়া ক্যাম্প থেকে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
এছাড়া সেটলাররা পাহাড়ি অধ্যুষিত বড়গ্রামেও হামলা করার চেষ্টা চালায়। তবে সেখানে পাহাড়িরা সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধমূলক অবস্থান নিয়ে থাকায় সেটলাররা হামলা করতে পারেনি।
স্থানীয় পাহাড়িদের অভিযোগ, ৩নং বড়নাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলি আকবর, একই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ধন মিঞা, আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন, আলাউদ্দিন ওরফে বাবুল (প্রাক্তন মেম্বার) ও শাহজাহানের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও পাহাড়িদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভয়ে এখনো অনেকে বাড়িতে ফিরে আসেননি।
আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে পাহাড়ি-বাঙালীদের নিয়ে মিটিঙ ডাকা হয়েছে বলে জানা গেছে।ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের সংগঠক প্রদীপ চাকমা এক বিবৃতিতে উক্ত হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার পূর্বক শাস্তি এবং ওই এলাকায় পাহাড়িদের জানমাল রক্ষায় আশু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ আগস্ট সেটলাররা তবলছড়ির মাষ্টার পাড়া ও কদমতলী গ্রামে হামলার চেষ্টা চালায়। এ সময় পাহাড়িরা ভয়ে অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যায়।
———-