খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার হরিধন মারমা পাড়া ও হেমঙ্গ কার্বারী পাড়ায় সেটলাররা হামলা চালিয়েছে। এ সময় প্রাণের ভয়ে পাহাড়িরা সবাই জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এ সুযোগে সেটলাররা হরিধন মগ পাড়া ও হেমঙ্গ কার্বারী পাড়ার কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। গতকাল ২৫ জানুয়ারি শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে মাটিরাঙ্গার উপজেলার ১০ নং রাবার বাগান এলাকার বটতলীতে ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ড নামের একটি ইটভাটায় অজ্ঞাত অস্ত্রধারীদের গুলিতে ফারুক হোসেন(১৯) নামে এক শ্রমিক নিহত ও আবুল হোসেন (৫৫) ও মো. শাহজাহান (৩০)নামে দু’জন আহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটলাররা উত্তেজনা সৃষ্টি করে এবং পাহাড়ি বিরোধী শ্লোগান দিয়ে পাহাড়িদের গ্রামে হামলা চালায়। এ সময় পাহাড়িরা সবাই জঙ্গলে পালিয়ে গেলে সেটলাররা হরিধন মগ পাড়া ও হেমঙ্গ কার্বারী পাড়ায় পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
যাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট কর হয় : সেটলাররা হরিধন মগ পাড়ায় একটি বৌদ্ধ বিহার ভাংচুর ও জিনিসপত্র লুটপাট ও চাহ্লাঅং মারমা, পিতা- চাইবউ মারমা নামে একজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ সহ কমপক্ষে ৩৫ টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
সেটলাররা পূর্ব খেদাছড়ার হেমঙ্গ কার্বারী পাড়ার বাসিন্দা মৃত থুংজয় ত্রিপুরার ছেলে বিজয় ত্রিপুরার(২২) বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে এবং তার ভাই মানিকধন ত্রিপুরা(২৬) ও বিদ্যা মোহন ত্রিপুরার(২৪) বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। সেটলাররা একই গ্রামের নীলমনি ত্রিপুরা(৪০) ও ধনবাঁশী ত্রিপুরার বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করে।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন বলে জানা গেছে।
ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক প্রদীপন খীসা এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে একটি শক্তিশালী মহল তৎপর রয়েছে। যার ফলে যে কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটলাররা পাহাড়িদের গ্রাম ও বাড়িঘর টার্গেট করে হামলা পরিচালনা করে থাকে। এ ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়।
বিবৃতিতে তিনি মিডিয়ার সমালোচনা করে বলেন, ইতিমধ্যে কিছু কিছু মিডিয়ায় ইটভাটা শ্রমিকদের ওপর হামলা ও একজন শ্রমিককে হত্যার ঘটনার সাথে ইউপিডিএফকে জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। যা সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইটভাটার শ্রমিকদের ওপর হামলা ও চাঁদা দাবির সাথে ইউপিডিএফের কোন সংশ্লিষ্টা নেই। ইউপিডিএফকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এ ঘটনার সাথে ইউপিডিএফকে জড়ানো হচ্ছে। এর আগেও বিভিন্ন ঘটনার সাথে এভাবে ইউপিডিএফকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছিল। তিনি বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের জন্য সকল সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে পাহাড়ি গ্রামে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের সাথে জড়িত সেটলারদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি ইটভাটার শ্রমিকদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ঘটনার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্যও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।#