রমেল চাকমা হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি চেয়ে ঢাকায় সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ
ঢাকা: “পাহাড়-সমতলে গণতান্ত্রিক শক্তি এক হও, পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ধরপাকড়, রাত-বিরাতে হয়রানি ঘেরাও ও তল্লাশি বন্ধ কর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক অবেধ ‘১১ নির্দেশনা’ বাতিল কর, সেনা-সেটলার সরিয়ে নাও! দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এইচএসসি পরীক্ষার্থী পিসিপি নেতা রমেল হত্যা, পরিবারের নিকট মরদেহ হস্তান্তর না করে সামাজিক রীতি-প্রথা লঙ্ঘনপূর্বক সেনাকর্তৃক পোড়ানো এবং আত্মীয়স্বজনকে চরম লাঞ্ছনা করার দায়ে গুরুতর অপরাধী নান্যাচর জোনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল বাহালুল আলম- মেজর তানভিরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবিলম্বে সাজার দাবিতে” প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে পথযাত্রা ও স্মারকলিপি পেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও রমেল চাকমা হত্যা প্রতিবাদ কমিটি।
আজ রবিবার ( ১৪ মে ২০১৭) ঢাকায় প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলা পাদদেশে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে স্মারকলিপি দেয়া উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে মিছিল সহকারে পদযাত্রা শুরু হয়।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে শাহবাগে পৌঁছলে সেখানে পুলিশি বাধায় পড়ে। পুলিশের বাধার মুখে পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে পিসিপি’র সভাপতি বিনয়ন চাকমার নেতৃত্বে ৫ সদস্যর একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে স্মারকলিপি পেশ করতে যান। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন পিএসএসওয়ান সাজ্জাদুল হাসান।
পদযাত্রাপূর্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা। বক্তব্য রাখেন সংগঠনটি সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, রমেল হত্যার প্রতিবাদ কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক শান্তনা চাকমা, শহীদ রমেলের মা আলো দেবী চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরুপা চাকমা।
সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা: ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এমএম পারভেজ লেলিন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট-এর ঢাবি শাখার সভাপতি ইভা মজুমদার, জাতীয় ছাত্র দলের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মুন্না, ছাত্র গণমঞ্চ-এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক সাহিদ বিলাস।
সভা পরিচালনা করেন পিসিপি কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা।
সমাবেশে রমেল হত্যার প্রতিবাদ কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক শান্তনা চাকমা বলেন, রমেলকে হত্যা করে সেনারা তার পরিবারের আশা আকাঙ্খাকেও হত্যা করেছে। নিরাপত্তা নাম দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা নিয়োজিত হলেও রাষ্ট্রীয় মদদে খুন, ধর্ষণ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। পাহাড় থেকে সেনাশাসন তুলে নেয়া না হলে ভবিষ্যতে আরো রমেলের মত অনেক ছাত্রকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তিনি রমেল চাকমার হত্যাকারী লে: কর্ণেল বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানান।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ডাঃ ফয়জুল হাকিম বলেন, যত দিন পর্যন্ত জনগণের সংবিধান, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবেনা তত দিন পর্যন্ত জনগণের মুক্তি সম্ভব নয়।
পাহাড়ে সেনাশাসন চলছে অভিযোগ করে এমএম পারভেজ লেনিন বলেন, “রমেল চাকমার হত্যাকা-ের পর সত্য ঘটনা জানতে ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দল নান্যাচর যাওয়ার পথে ছয় বার সেনাবাহিনী বাধা সম্মুখীন হতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত কোন যুক্তিতে না পেরে সন্ত্রাসী হামলা আশংঙ্খা নাটক বানিয়ে নান্যাচর জোন থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, অযৌক্তিক সেনাশাসনকে বৈধতা দেয়ার জন্য পুনর্বাসিত সেটেলারদেরকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সেনাশাসনের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হাওয়ার আহ্বান জানান।
বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য্য বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িরা দিন দিন সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছে। পাহাড় থেকে সেনা-সেটলার প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ি জাতিসমূহের বিকাশ ঘটানো সম্ভব নয়।”
জাতীয় ছাত্র দলের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মুন্না বলেন, “বিচারহীনতা সংস্কৃতি ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সমতল ও পাহাড়ে নিপীড়িত জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।”
ছাত্র গণমঞ্চ-এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক সাহিদ বিলাস বলেন, রমেলকে হত্যা করে সেনারা বাংলাদেশের সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে। এই ন্যাকারজনক হত্যাকা- মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। তিনি অবিলম্বে অভিযুক্ত সেনাদের শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণ ও তনু হত্যাকান্ডের সাথে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী খুন, ধর্ষণের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে রমেল হত্যাকারী চিহ্নিত সেনা কর্মকর্তা লে. কর্ণেল বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, শহীদ রমেল পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ধরপাকড় বন্ধ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দমনমূলক ‘১১ নির্দেশনা’ বাতিল এবং পাহাড় থেকে সেনা-সেটলার তুলে নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান।
_______
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।