রাঙামাটির কাউখালিতে বাঙালি সেটলার পুনর্বাসনের জন্য লিস্ট করা হচ্ছে

0

সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের জমিতে নতুন করে বাঙালি সেটলার পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র জোরেসোরে শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ জন্য রাঙামাটির কাউখালিতে সেটলার বাঙালি পরিবারের লিস্ট করা হচ্ছে, যাদেরকে দীঘিনালার বাবুছড়া ও সাজেকে পুনর্বাসন করা হতে পারে।

Bengali settler rehabilitation form“পুর্ণবাসন জোন ভিত্তিক তথ্য তালিকা” শিরোনামে একটি ফরমে পুনর্বাসনে ইচ্ছুক সেটলারদের কাছ থেকে চৌদ্দটি তথ্য চাওয়া হয়েছে। যেমন, পরিবার প্রধানের নাম, পিতার নাম, লোকসংখ্যা; সরকারীভাবে ৫ একর জমি বন্দোবস্ত পেয়েছিল কিনা, আগমন ভাতা ২,৫০০ টাকা পেয়েছিল কিনা, দুই বান্ডিল ঢেউটিন পেয়েছিল কিনা, একজোড়া হালের গরু অথবা ১৫,০০০ টাকা পেয়েছিল কিনা, হর্টিকালচার লোন ১০,০০০ টাকা পেয়েছিল কিনা, হাজি ক্যাম্পের কার্ড নং যদি থাকে তার উল্লেখ, তার নামে বন্দোবস্ত প্রাপ্ত জমি বিক্রি, বন্ধক অথবা অন্য কোনভাবে হস্তান্তরিত হয়ে থাকলে তার উল্লেখ, তার নামে গুচ্ছগ্রাম রেশন কার্ড যদি থাকে তার নম্বর, গুচ্ছগ্রামের নাম ও কার্ড নম্বরসহ তার রেশন কার্ড নতুন, পুরাতন, বাতিল, বন্ধক, বিক্রি ও জবরদখল আছে কিনা; মাসিক ভাতা ৩০০ টাকা করে পাচ্ছেন কিনা, গৃহ নির্মাণ বাবদ ১,৫০০ টাকা বুঝে পেয়েছে কিনা, বর্তমানে কোন খাস জায়গায় বাড়ি বসত, বাগান, চাষাবাদে দখলে থাকিলে তার পরিমাণ, দাগ অথবা চৌহদ্দি ও মৌজা নম্বর উল্লেখ এবং তার নামে কোন বন্দোবস্ত মামলা রজু হয়েছে কিনা – হয়ে থাকলে মামলা ও মৌজা নম্বর।

ফরমটি পূরণ করার পর পরিবার প্রধানের স্বাক্ষর অথবা টিপসহি ও সনাক্তকারী গ্রুপ লিডারের স্বাক্ষর দিতে হবে। ফরমে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে “সুপ্রীম কোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন মামলা নং – ৬৩২৯/২০০১”।

জানা গেছে, মোট ৩০ হাজার বাঙালি সেটলার পরিবারকে এর আওতায় পুনর্বাসন করা হবে। কাউখালিতে পাঁচ হাজার পরিবারের কোটা নির্দিষ্ট করা হলেও আজ পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার সেটলার পরিবার ফরম পূরণ করে জমা দিয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

ফরম জমা নেয়ার সময় গ্রুপ লিডাররা প্রতি সেটলার পরিবারের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে নিচ্ছে, যদিও এভাবে টাকা নেয়া সরকারীভাবে বৈধ কীনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কাউখালি ছাড়া আর কোন কোন এলাকা থেকে পুনর্বাসনের জন্য সেটলারদের বাছাই করা হচ্ছে তা জানা যায়নি। তবে তাদেরকে দীঘিনালার বাবুছড়া ও সাজেকে পাহাড়িদের জমিতে পুনর্বাসন করা হতে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেটলার লিডার জানিয়েছেন।

অনেকে ধারণা করছেন এই নতুন সেটলার পুনর্বাসন কার্যক্রমকে মাথায় রেখে বাবুছড়া ও দীঘিনালায় বিজিবির দু’টি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন করা হচ্ছে।

পাহাড়িদের জমিতে এই বিপুল সংখ্যক সেটলারকে পুনর্বাসন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারি বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামে আন্দোলনরত ৮ সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ডর নেতৃবৃন্দ এক যৌথ  বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে বাঙালি সেটলার পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, পাহাড়িদের জমিতে বাঙালি সেটলারদের পুনর্বাসন করা হলে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না এবং তার বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

পাহাড়িদের জমিতে এই বিপুল সংখ্যক সেটলার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি মারাত্মকভাবে অবনতি হবে উল্লেখ করে তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য একটি বিশেষ মহল নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। নতুন করে বাঙালি সেটলার পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ সেই প্রচেষ্টারই অংশ।

তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন পাহাড়িদের জমিতে বাঙালি সেটলারদের পুনর্বাসন করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ তা কোনভাবেই মেনে নেবে না এবং তার বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

পাহাড়ি নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দুই ফৌজি শাসক জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসা সেটলারদের সম্মানজনকভাবে সমতলে পুনর্বাসনের দাবি জানান।

তারা ভারত-প্রত্যাগত ও আভ্যন্তরীণ পাহাড়ি শরণার্থীদের কাছে তাদের নিজ জমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার একদিকে পাহাড়িদের পুনর্বাসনের পরিবর্তে তাদের নিজেদের জায়গা জমি থেকে উৎখাত করছে, অন্যদিকে বাঙালি সেটলারদেরকে পাহাড়িদের জমিতে পুনর্বাসন করছে। তারা সরকারের এই ঘৃন্য বর্ণবাদী নীতির নিন্দা জানান এবং বলেন, দরিদ্র বাঙালি সেটলারদেরকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পরিণাম কখনোই শুভ হবে না।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি থুইক্যচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি সোনালী চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরূপা চাকমা(২), সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমা, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সংগঠক কাজলী ত্রিপুরা ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ডের সদস্য সচিব আনন্দ প্রকাশ চাকমা।

————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More