রাঙামাটির কুদুকছড়িতে তিন নারী সংগঠনের যৌথ কাউন্সিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

0

রাঙামাটি : ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী নির্যাতন, খুন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে নারী সমাজ গর্জে উঠুন, নারী সমাজের পূর্ণ মর্যাদা ও অধিকার আদায়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামিল হোন” এই আহ্বান সম্বলিত শ্লোগানকে মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে ধারণ করে বুধবার (১৮ অক্টোবর) রাঙামাটির কুদুকছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা কমিটি এবং ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির যৌথ কাউন্সিল ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত কাউন্সিল ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যৌথ কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক শান্তি প্রভা চাকমা।

# মঞ্চে প্রধান অতিথি রাণী ইয়েন ইয়েনসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রাণী ইয়েন ইয়েন।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য নতুন কুমার চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যচিং মারমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি বিনয়ন চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যৌথ কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মন্টি চাকমা।

কাউন্সিল ও আলোচনা সভা কার্যক্রমের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল শহীদদের স্মরণ ও যথাযথ সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১(এক) মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

# কাউন্সিল ও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন রাণী ইয়েন ইয়েন

আলোচনায় প্রধান অতিথি চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রাণী ইয়েন ইয়েন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে পাহাড়ি নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। নারীরা আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ না করলে এখানকার আন্দোলন-সংগ্রাম সফল হবে না।

তিনি বলেন, আমরা জানি প্রশাসন বিভিন্ন টালবাহানা করে কাউন্সিল অনুষ্ঠান করতে দেবে না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমে  বাধা প্রদান করবে।

তিন নারী সংগঠনের কাউন্সিল ও আলোচনা সভায় কিছু কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য নারী সংগঠনের নেতা-কর্মিদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

# বক্তব্য রাখছেন ইউপিডিএফ নেতা নতুন কুমার চাকমা

সভায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা রাজনৈতিক আন্দোলনে নারীদের জোরালো অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের যৌথ ও জোড়ালো ভুমিকার মাধ্যমেই পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার প্রশাসনের সকল অন্যায় নিপীড়ন, নির্যাতন ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন শুধুমাত্র নিপীড়িত নারীদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই সংগঠন সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যেভাবে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে হিল উইমেন্স ফেডারেশন সোচ্চার রয়েছে।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা হয়েছে। চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। যা নজিরবিহীন, অত্যন্ত ন্যাক্কারজক ও নগ্ন সাম্প্রদায়িক হামলার বহিঃপ্রকাশ।

এছাড়া কাউন্সিল উপলক্ষে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র লিখিত শুভেচ্ছা বার্তায় কাউন্সিলের সফলতা কামনা করে বলেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। নাটক, সিনেমায় ও বিজ্ঞাপনে নারীদের যেভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে তাতে নারী সম্পর্কিত ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে অবক্ষয়ের সৃষ্টি করেছে। শাসক শ্রেণী তার নিজের স্বার্থে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনী কর্তৃক নারী নির্যাতন, খুন ও ধর্ষণ এবং জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে হিল উইমেন্স ফেডারেশন যে নিরলস সংগ্রাম পরিচালনা করছে আমরা তার প্রতি সংহতি জানাই।

বাংলাদেশে নারী আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রেই হিল উইমেন্স ফেডারেশন জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র আশা প্রকাশ করে।

# শপথ গ্রহণ করছেন নবগঠিত ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও পা: চ: নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা কমিটির সদস্যবৃন্দ

আলোচনা সভা শেষে কাউন্সিলের মাধ্যমে তিন নারী সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ রাঙামাটি জেলা শাখার নবগঠিত ১৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে অনিতা চাকমাকে সভাপতি ও সান্তনা খীসাকে(কার্বারী) সাধারণ সম্পাদক ও পাইক্রামা মারমাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর রাঙামাটি জেলা শাখার ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নবগঠিত কমিটিতে কুহেলী চাকমাকে সভাপতি, দয়াসোনা চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও জেসী চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে। আর ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নবগঠিত ১৫ সদস্যের কমিটিতে শান্তি প্রভা চাকমাকে সভাপতি, সান্তনা চাকমাকে(ইউপি মেম্বার) সাধারণ সম্পাদক ও প্রীতিবালা চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

# শপথ গ্রহণ করছেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নবগঠিত রাঙামাটি জেলা কমিটির সদস্যবৃন্দ

নারী সংঘ ও ঘিলা নারী নির্যতন প্রতিরোধ কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান কাজলী ত্রিপুরা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নবগঠিত রাঙামাটি জেলা কমিটিকে শপথ বাক্য পাঠ করান সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা।
—————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More