আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে
রাঙামাটির কুদুকছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারী সমাবেশ
রাঙামাটি প্রতিনিধি ।। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাঙামাটির কুদুকছড়ি এলাকায় নারী সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি সদর উপজেলা শাখা।
আজ ৮ মার্চ ২০২১, সোমবার দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি সদর উপজেলা শাখার সভাপতি রিমি চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিশি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ প্রতিনিধি কর্ম চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, সহ সাধারণ সম্পাদক অংকন চাকমা, রাঙামাটি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্তি সভাপতি নিকন চাকমা, ইউপিডিএফ পরিবার প্রতিনিধি তাপসি চাকমা, জনপ্রতিনিধি রিতা চাকমা ও নারী নেত্রী মিথিলা চাকমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি সদর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি রিতা চাকমা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী ধর্ষণ, নির্যাতন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী ধর্ষণকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তৎকালিন হিল উইমেন্স ফেডারেশন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে নিজ বাড়ি থেকে সেনাবাহিনীর লে. ফৌরদোস গং কর্তৃক অপহরণ করা হয়। আজ ২৫ বছরেও এর বিচার হয়নি, চিহ্নিত অপহরণকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত পাহাড়ি নারীদের উপর যত ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে কোনটিরই সঠিক বিচার হয়নি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়নি। যার কারণে এখানে ধর্ষণ, নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল ধর্ষণ-নির্যাতনের বিচার দাবি করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে গ্রেফতার বানিজ্য চলছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, অন্যায়ভাবে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, জামিনপ্রাপ্ত নেতা-কর্মীদের জেলগেট থেকে গ্রেফতার, বাড়ি-ঘরে তল্লাশিসহ নানা নিপীড়ন-হয়রানি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের লুটেরা শাসকগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ঘোষাণাপত্র ও নীতিমালায় স্বাক্ষরদান করলেও বাস্তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। এখানে ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তাদের দমন-পীড়ন করার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে।
বক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের ঘোষণা অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে এর প্রতিবাদ করেন। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার নামে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই জনগণকে অনিরাপদ করে তুলেছে। তাদের অন্যায়-অত্যাচারে জনগণ নিজ বাড়িতেও শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। কাজেই, সেনাবাহিনী কিংবা পুলিশ মোতায়েন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপন করা যাবে না। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে তাদের ন্যায্য অধিকার দিয়েই এখানে স্থায়ী শান্তি স্থাপন করতে হবে।
বক্তারা সরকার উন্নয়নের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদের নীলনক্সা বাস্তবায়ন করছে অভিযোগ করে বলেন, বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোদের জমি বেদকল করে তাদেরকে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের জন্য সেখানে সেনাবাহিনী ও সিকাদার গ্রুপ মিলে পাঁচতারকা হোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করছে। রাঙামাটির সাজেক পর্যটন এলাকা থেকে পাহাড়িদের বিতারণের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। সীমান্ত সড়কের নামে পাহাড়িদের নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এমন জাতি বিধ্বংসী উন্নয়নের প্রয়োজন নেই মন্তব্য করে বক্তারা অবিলম্বে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।
সমাবেশ থেকে বক্তারা সকল ধরনের নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার নারীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পুর্ণ ব্যর্থ। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলতে হবে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ, নির্যাতন বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও ধর্ষকদের সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়দান বন্ধসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।