লংগদু (রাঙামাটি): লংগদু গণহত্যা দিবসে উপজেলার হাড়িকাবায় স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
বুধবার (৪ঠা মে) বিকাল ৩টায় লংগদু উপজেলার হাড়িখাবার ধনপুদি বাজারে শহীদদের স্মরণে ১মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যে দিয়ে স্মরণ সভা শুরু হয়। সভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত চাকমার সঞ্চালনায় ও সভাপতি অনিল চাকমা’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ এর লংগদু উপজেলা সংগঠক দীপ্ত চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা শাখার সদস্য ধর্ম শিং চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক এন্টি চাকমা, লংগদু ইউনিয়নের মেম্বার বুদ্ধ রঞ্জন চাকমা ও চম্পা চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, আজ ৪ঠা মে লংগদু গণহত্যার ২৭ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৮৯ সালের এদিন সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেটলার বাঙালিরা পাহাড়ি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে পরিকল্পিতভাবে হামলা করে এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, বৌদ্ধ মন্দির ও বুদ্ধমুর্তি ধ্বংস করে। সেটলারদের এ হামলায় বহু পাহাড়ি হতাহত হয়। দীর্ঘ ২৭ বছরেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।
বক্তারা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, হত্যাকারীরা দা, বল্লম ইত্যাদি আগ্নেয়াস্ত্রের দ্বারা ও গুলি করে নিরীহ নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে হত্যা করে। তারা হত্যা করে ক্ষান্ত না হয়ে হত্যার পর মৃতদেহগুলি আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মৃতদেহগুলি ধর্মীয় বিধিতে পর্যন্ত সৎকার করা সম্ভব হয়নি।”
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ ২৭ বছরেও সরকার এ হত্যাযজ্ঞের বিচার করেনি এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু লংগদু গণহত্যা নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত কোন হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হয়নি। যার ফলে পাহাড়িদের উপর এ ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা এখনো চলমান রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কতৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে জারিকৃত দমনমূলক ১১ দফা নির্দেশনার মাধ্যেমে পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন চেষ্টা চালাচ্ছে। পাহাড়ি জনগণ জানে কিভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে নিতে হয়। তারা অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয় কর্তৃক জারিকৃত দমনমূলক ১১ দফা নির্দেশনা বাতিলের দাবীসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
বক্তারা স্মরণ সভায় আরো বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রামে ভূমি বেদখল অব্যাহত রয়েছে। আগে সরকার গণহত্যা চালিয়ে ভূমি বেদখল করেছে, বর্তমানে শিক্ষার নামে ভূমি বেদখল করছে, উন্নয়নের নামে ভূমি বেদখল করছে। রাঙামাটিতে জনগনের মতের বিরুদ্ধে মেডিকেল কলেজ,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং সাজেকসহ ভিবিন্ন জায়গায় পর্যটনের নামে ব্যাপক ভাবে ভূমি বেদখল হচ্ছে।
বক্তারা অবিলম্বে লংগদু গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
স্মরণসভার পর লংগদু গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে অস্থায়ী শহীদ বেদীর সামনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
——————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।